বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

ভাই বোনের ভালবাসা
-কুত্তা কুত্তা কুত্তা ।
-তুই।
-ভাইয়া তুই আমাকে লাভ
করিস না।তুই খুব পচা।
-ঐ পিচ্চি লাভ মানে কি?
এত ছোট বয়সেই পাইক্কা
গেছস দাড়া আজি তোর
বিয়ে দিয়ে দেব।
-
মা ভাইয়া আমাকে পিচ্চি বলছে?
আর
আমাকে বিয়ে দেবে বলছে ।
-থাম থাম মাকে ডাকিস
না।
-ওকে।তবে বর কিন্তু
ডাক্তার হওয়া চাই
তা না হলে বিয়ে করব
না।
-আ।এই মেয়ে বলে কি?
.
আমি কথা বলছিলাম আমার
কিউট সাত বছর
বয়সী বোনটার সাথে।
তার নাম মায়া।
আল্লাহ মনে হয় সব
মায়া দিয়ে তাকেই
সৃষ্টি করেছে।
আমি তাকে মায়াবতী বলে ডাকি।
ইদানিং খুব বেশীই
জ্বালাতন করছে।
খালি এখানে যাব
ওখানে যাব।এটা খাব
ওটা খাব।খুব
বিপদে আছি তাকে নিয়ে ।
.
কয়েক দিন আগের ঘটনা।
.
আমি ছাদে বসে সিগারেট
খাচ্ছিলাম।হঠাত পায়ের
শব্দ কে যেন ছাদে আসছে।
সিগারেটটা পিছনে লুকিয়ে।
.
-ভাইয়া ভাইয়া আম্মু
ডাকছে।
-তুই যা আমি আসছি।
-ভাইয়া তোমার পিছন
থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে কেন?
-কই নাতো তুই যা।
-ও বুজেছি।তুমি সিগারেট
খাচ্ছো।দাড়াও
আম্মুকে বলছি।
-প্লিজ
মায়া আম্মুকে বলিস না।
-না বললে কি দিবা।
-তর কি লাগবে।
-
এত্তগুলো কিটক্যাট,অনেক
ট্যাডি আর
একটা সিগারেট
হি হি হি।
-খুব দুষ্ট হয়েছিস তাই
না।
.
কয়েক ঘন্টা পড়ে আবার
আমার
সাথে ঝগড়া করে মায়া আব্বু
আম্মুকে বলে দেয় আমার
সিগারেট খাওয়ার কথা।
ফলস্বরূপ আব্বুর বিশাল
বকা।
সেদিন রাগ করে বেশ
জোরেই মায়াটার
গালে একটা থাপ্পর
মেরেছিলাম।
.
থাপ্পর মারার পর নিজের
কছে নিজেরই খুব খারাপ
লাগল।বুকের মধ্যে হু হু
করে উঠল।
মনে হলো আমি মানুষ
না।মানুষ হলে কি আর এত
কিউট একটা মেয়ের
গালে এত
জোরে মারতে পারি।
.
একদিন পর
.
-আমার
মায়াবতীটা কইরে।
দেখো তোমার জন্য
কিটক্যাট আর
ট্যাডি আনছি।
-লাগবে না যাও ভাগো।
-(কান ধরে)আর আমি আমার
বোনটাকে মারব না।
-তুমি খুব পচা।
-ওকে আমাকেও
একটা মারো।
-(আমার গালে চুমু দিয়ে)
তুমি আমার ভাইয়া যে।
-সেদিন ওকে অনেকখন
জড়িয়ে ধরে কেদেছিলাম।
-(আমার চোখের
পানি মুছে দিয়ে)
ভাইয়া কাদছো ক্যান??
-কই নাতো।
-তুমি কাদলে আমিও কিন্তু
কাদবো।
-আচ্ছা।চল তকে নিয়ে আজ
চিড়িয়াখানায় যাব।
-
(হাতে তালি দিয়ে,আমাকে আরেকটা চুমু
দিয়ে)
ভাইয়া তুমি খুব ভাল।
-যা আম্মুকে বলে রেডি হ।
.
বার বছর পর
.
মায়াটা অনেক বর
হয়ে গেছে।ছোট্ট
মায়া কবে যে বড়
হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম
না। আজ মায়ার বিয়ে।
হ্যা ডাক্তার পাত্রর
সাথেই।
.
বরের বাড়িতে যাওয়ার
সময় মেয়েটা হাউ মাউ
করে আমার
বুকে মাথা দিয়ে
কাদছিল।আমারও যে কম
কষ্ট হচ্ছিল তা না।
হাজার হলেও
তো আমি তার বড় ভাই।
তাকে একটু হাসানোর জন্য
আমি তার কানের কাছ মুখ
নিয়ে বললাম...
.
-তর মেকাপ কিন্তু চোখের
পানিতে নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে । আর কাদিস
না।
.
বুজতে পারলাম
না মেয়েটা এই
কথা শুনে আরও হাউ মাউ
করে কেদে উঠল।
.
আরও চার বছর পর
.
সবাই চিন্তিত
মায়াটা হাসপাতালে...
একটু পরে ডাক্তার
এসে যে নিউজটা দিল
তা শুনে আমি দুই হাত
লাফিয়ে উঠলাম...
.
আমি মামা হয়েছি।
অর্থাত আরেকটা মায়ার
সৃষ্টি।

ভালবাসার গল্প  হিমু ক্যাফের

হিমু ক্যাফের দোতলায় বসে আছি। যদিও
এখানে মাঝে মাঝেই আসি। তবে আজকের
আসা টা একদম আলাদা। কারণ আজ
তানিয়া আমার সাথে দেখা করার জন্য এই
জায়গা টায় আসতে বলেছে।
তানিয়াকে অনেক ঘুরিয়েছি। কিন্তু আজ আর
সেটা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই
এখানে আসতে হলো।গম্ভীর আর চিন্তিত
একটা ভাব নিয়ে হিমু ক্যাফের
পুরোটা নিঁখুত ভাবে দেখে নিলাম। হিমু
ক্যাফ টাকে আজ বড়ো অচেনা মনে হচ্ছে।
বিশেষ মুহুর্তে বিশেষ
জায়গা গুলোকে হয়তো এমনি লাগে।
আমি জানি তানিয়া আমাকে দেখে চমকে উঠবে।
কারণ এর আগে ও আমাকে আরো একবার
দেখেছে। যদিও সেটা একজন অপরিচিত
মানুষ হিসাবেই।
ও কি বিশ্বাস করবে আমার সাথেই গত এক
বছর ধরে অনলাইনে অনবরত চ্যাট
করে গেছে। সুখ দুঃখের অনুভূতি ভাগ
করেছে। আর ফোন নাম্বার আদান প্রদানের
পর ফোনে কথা বলে রাতের পর রাত
জেগে জেগে কাটিয়েছে। মোবাইল
টা হাতে নিয়ে তানিয়াকে ফোন দিলাম,
-আমি হলুদ শার্ট পড়ে হিমু
ক্যাফে বসে আছি। তোমার
আসতে কতো ক্ষণ?
-এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি। আর দুই
মিনিট।
-হুম। আমি দোতলায় তোমার জন্য
অপেক্ষা করছি।
তানিয়া আমাকে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাস
করলো,
- আমার না খুব লজ্জা লাগছে।
আমি কি করে তোমার মুখোমুখি দাড়াবো ?
তোমার পাশাপাশি বসে কথা বলবো ?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-তাহলে আমি চলে যাই। লজ্জা নামক
কোনো কিছুরই মুখোমুখি তোমাকে দাড়
করাতে চাই না। তানিয়া এবার উত্তেজিত
গলায় চেচিয়ে বললো,
-না, তুমি যাবে না। চুপ করে বসে থাকো।
আমি আসছি।
তানিয়ার কথা মতো আমি চুপ
করে বসে আছি। তবে এর আগে নিজের
ফোনটা বন্ধ করে নিলাম।
যাতে তানিয়া ভিতরে এসেই
বুঝতে না পারে আমিই সেই ছেলে।
আমি জানি তানিয়া আমার ফোন বন্ধ
পেলে হয়তো অনেক কষ্ট পাবে। খুব বিব্রত
কর অবস্হায় পড়বে।আর রাগে আমার চৌদ্দ
গোষ্টি উদ্ধার করবে। তানিয়া দু তালায়
এসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
ফোনটা একবার হাতে নিচ্ছে আরেক বার
কানে নিচ্ছে। আমি দূর থেকে ওর মুখের
দিকে তাকালাম। ওর চোখ গুলো ঝলঝল
করছে। বৃষ্টি আসার আগে সমস্ত
মুখে যেনো অজস্র মেঘের আনাগোনা।
বড্ডো মায়া হচ্ছে ওর জন্য। ওর চোখ
গুলো হয়তো হলুদ রঙের শার্ট
পড়া কোনো ছেলের মুখ খুজে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু এখানে হলুদ শার্ট গায়ে কেউ নেই।
আমি চেয়ার
থেকে উঠে আস্তে আস্তে তানিয়ার
কাছাকাছি গেলাম। কৌতুহলী ভাব
নিয়ে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,
-আপনি এখানে?
তানিয়া কটমট চোখে আমার
দিকে তাকালো। আর
বিরক্তি ভরা কন্ঠে জিজ্ঞাস করলো,
-আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা।
তবে চেনাচেনা লাগছে।
আমি উত্সাহিত গলায় উত্তর দিলাম,
-ঔ যে সিএনজি তে। তিন জনের
সিটে চাপাচাপি করে চারজন
বসেছিলাম। সাথে আপনার আরো দুইজন
বান্ধবী ছিল।
-হুম, চিনতে পেরেছি।আর
আমি এখানে এমনিতেই এসেছি।
তানিয়া আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করছে। কারণ ও এখন হলুদ শার্ট
পড়া ছেলেটির চিন্তায় মগ্ন।
হয়তো হিসাব মেলাতে পারছে না, মানুষ
এতো নিষ্টুর কেনো?
তাই নীল শার্ট পড়া কারো প্রতি আগ্রহ
দেখানোর তার কথা নয়।
তানিয়া নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা অন করলাম।
সাথে সাথে একটা মেসেজ,
-ছিঃ মানুষ এতো নিচ হতে পারে !!
তানিয়া কে ফোন দিয়ে যাচ্ছি।
তানিয়া ফোনটা ধরছে না।
নিজেরই নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।
শেষে ওকে মেসেজ দিলাম।
-প্লিজ ফোনটা ধরো। আমার একটু প্রবলেম
ছিল। আর আমি দোতলাতেই আছি।
তানিয়া এবার নিজেই ফোন দিল।
কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম।
তানিয়া কাঁদছে। ফোনো কোনো মেয়ে মানুষ
কাঁদছে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। কোনো কথাই
বলতে পারছে না। আমি ওকে অপরাধীর
গলায় বললাম, তুমি নিচে দাড়াও। আমিই
উপর থেকে নামছি।
নিচে এসে তানিয়ার পাশাপাশি আবার
দাড়ালাম। তানিয়া আমায়
দেখে আবারো বিরক্ত। চোখের জল
গুলো আড়াল করার আপ্রাণ
চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমি তানিয়াকে মুচকি হেসে বললাম,
-দাড়িয়ে না থেকে চলুন কোথাও
গিয়ে বসি।
আমার এই টাইপ কথা শুনে তানিয়া চোখ
মুখ লাল করে আমার দিকে তাকালো।
মনে হচ্ছে চোখের আগুনে আমায়
গিলে খাবে। কিন্তু তানিয়া কিছুই
না বলে আস্তে আস্তে দৃষ্টি অন্য
দিকে ফিরিয়ে নিল। হয়তো ভাবছে,
ছেলেটা এতো বেহায়া কেনো ?
সিএনজিতে দেখেছে বলে এভাবে গায়ে পড়ে কথা বলতে হবে।
আমি মোবাইল টা বের করে ওর
নাম্বারে ফোন দিলাম। ওর
ফোনটা বাজছে। ও চোখের পলকেই
ফোনটা ধরে কানে নিল। আমি ওর
পাশে দাড়িয়ে থেকেই ওকে বললাম,
-কি যাবে না আমার সাথে???
-আরে আমি তো দাড়িয়েই আছি।
তুমি আসছো না কেনো?
আমি বিড় বিড় করে উত্তর দিলাম,
-আমিও তো দাড়িয়ে আছি।
এবার যেনো তানিয়ার খেয়াল হলো।
ফোনটা কানে রেখেই অবাক চোখে আমার
দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ওর
যেনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমি লজ্জা শরম মাথা খেয়ে তানির
হাতটা ধরে বললাম,
-এবার চলো তো আমার সাথে।
দুজন পাশাপাশি হেটে যাচ্ছি।
তানিয়া কিছুই বলছে না। ওর ঘোর
হয়তো এখনো কাটি নি।
হঠাত্ নীরবতা ভেঙ্গে তানিয়াই
কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-তোমাকে আমার
কি করতে ইচ্ছে করছে জানো?
-কি???
-কান ধরে উঠ বস করাতে।
তুমি এতো বড়ো চিট। এত্তো গুলা পাজি,
এত্তো গুলা গাধা, এত্তো গুলা বান্দর।
এবার আমি ওর দিকে তাকিয়ে খিঁল খিঁল
করে হেসে উদাস ভঙ্গিমায় বললাম,
-তুমি যে "এত্তো গুলা তানি" সেদিন
সিএনজিতে বসেই চিনে নিয়েছিলাম।
তাই "এত্তো গুলা মজাও"
লুটে নিয়ে ছিলাম। আর
তোমাকে "এত্তো গুলা সারপ্রাইজ"
দেবো বলে সব কিছুই পেটের মাঝে চেপেও
রেখেছিলাম।।
এবার তানির এত্তো গুলা কিল আমার
পিঠে বুকে পড়তে লাগলো।।।
বুঝতে পারছি মেয়েটা খুব
বড়ো একটা সারপ্রাইজ পেয়েছে। আর আমার
নিজেকে গল্প উপন্যাসের নায়কের
মতো লাগছে।।।।
আবেগপ্রবন ভালবাসার গল্প
লিংকটা কপি করেই মেয়েটাকে মেসেজ
করলো অপু।
-কংগ্রেচুলেশন! আপনার এই
লেখাটা পেজে দেয়া হয়েছে!
-ধন্যবাদ। ওটার কথা আমি প্রায় ভুলেই
গিয়েছিলাম!
-আচ্ছা, জীবনের প্রতি খুব
অনীহা মনে হচ্ছে! কেন?
-কারণ ওটা আমাকে কিছুই
দিতে পারেনি।
-নিজে বোধহয় নিতে পারেননি! এখন
ব্যর্থতা ঢাকতে জীবনের দোষ!
-
ছোট্ট কনভার্সেশনটা এখানেই
থেমে গেলো। সিন করার
সময়টা দেখে আরো একবার বিরক্ত
হলো অপু। ১৫ মিনিট হলো কোন সাড়াশব্দ
নাই!
'বিচ্ছিন্ন
ঘটনা হিসেবে ব্যপারটা ভুলে যাওয়া যায়
' ল্যাপটপটা বন্ধ
করতে করতে ভাবলো "আমি স্বপ্ন"
আইডির মালিক।
***
ভুলে যেতে চাইলেও পরদিন
সকালটা অপুকে মনে করিয়ে দিলো সেই
বিচ্ছিন্ন ঘটনার শেষ থেকে।
ইনবক্স চেক করতেই
চোখে পড়লো মেসেজটা।
-ব্যর্থতা ঢাকতে পারলাম না। তাই
চলে যাচ্ছি। কালকের সকালটা নাকি খুব
দামী! ওটা দেখে যাবো। সাদা কাগজ
গুলোই আমার সুইসাইড নোট। অকারণেই
চলে যাচ্ছি কিনা!
সস্তা রসিকতা মেশানো সিরিয়াস
ধরনের মেসেজটা অপু তিনবার পড়লো।
পাঠানোর সময়টা মধ্যরাত।
মধ্যরাতে জেগে থাকা সব মানুষের
ভিতরেই কিছুটা পাগলামো কাজ করে।
মেয়েটা মানষিক সমস্যায় ভুগছে।
রিপ্লাই দেয়ার বক্সটা উপস্থিত। কিন্তু
কালো হয়ে আছে "রহস্যময়ী বাচাল
কাব্য" নামটা।
ঝাড়া আধঘণ্টা ওভাবে বসেই
চিন্তা করলো ছেলেটা।
***
সাইকোলজিক্যাল ব্যপার স্যাপার
নিয়ে কোন আগ্রহ নেই ওর। কিন্তু এই
মেয়ের ব্যাপারটা কেন যেন খুব টানছে।
সিদ্ধান্ত স্থির করেই গুগল
ম্যাপে ঢুকলো অপু। ঢাকা থেকে যশোর
কোর্ট স্টেশনের ডিসট্যান্স দেখলো।
এরপর ট্রেনের খোঁজ। দুপুর দুইটায়
বসুধা এক্সপ্রেস।
লোকেশন খোঁজার ব্যপারে সম্পূর্ণ
রূপে সাহায্য করলো অপুর অন্ধকারে ঢিল
ছোড়ার প্রবনতা আর পেজে পোস্ট
হওয়া "রহস্যময়ী বাচাল কাব্য"র সেই
গল্পটা।
***
পনের মিনিট লেট করে ছাড়লো ট্রেন। অপু
নিজের উপর বেশ বিরক্ত। সিদ্ধান্তটা খুব
খামখেয়ালি হয়ে যাচ্ছে।
প্রথমতঃ মেয়েটার কোন
ঠিকানা বলতে কিছুই নেই! দ্বিতীয়ত ও
আত্মহত্যা করবে কিনা তারও তো কোন
ঠিক নেই! শুধু মাত্র
একটা গল্পকে পুঁজি করে এই গাধামি করার
কোন মানে হয়!!
অপু তবুও আশায় বুক বাঁধে। গাধাদের
বুকে কোন আশা থাকেনা।
***
রাত সাড়ে দশটায় ট্রেন কোর্ট
স্টেশনে এসে পৌঁছলো।
আড়মোড়া ভাঙলো অপু।
পকেটে ভাইব্রেশন হচ্ছে মোবাইলটা,
আম্মার ফোন।
"ভালো আছি ..হ্যাঁ হ্যাঁ রুমেই ..."
মেসে থাকায় বেশ সুবিধা। আম্মা খুব
একটা দুশ্চিন্তা করেনা!
***
একে তো রাতের বেলা। তার উপর শীত।
মেয়েটা গরমের
সময়টা বেছে নিতে পারতো!
অথবা বর্ষাকাল।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে রেললাইনের উপর
দাড়িয়ে থাকতো, ট্রেনের হুইসেল
শোনা মাত্রই কেঁপে উঠতো খানিকটা,
ভয়ে অথবা ঠান্ডায়! বৃষ্টির আদর
পেতে আরো কয়েকটা দিন
বেঁচে থাকতে চাইতো!
ধুর! কি সব হাবিজাবি ভাবছি। অপু যেন
নিজেকেই নিজে বললো!
"মামা ,এক কাপ চা দেন তো।" রুটিটায়
ছোট্ট কামড় বসিয়ে অর্ডার দিলো সে।
***
ঘন্টার কাঁটা এগারোকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর
মাত্র পনেরো মিনিট বাকি। দোকানপাট
খোলা নেই বললেই চলে। আরো এক কাপ
চায়ের অর্ডার
দিয়ে রুটি চিবাতে লাগলো অপু। শীতের
রাতটা কিভাবে কাটবে বুঝতে পারছে না।
ভোর হতে এখনো ঘন্টা ছয়েক বাকি।
"ভাইজান, কই থেকে আসছেন ? যাইবেন
কই? "গ্রাম্য গভীর রাতের কাস্টমারের
উদ্দেশ্যে দোকানদারের প্রশ্ন।
"ঢাকা থেকে আসলাম। । ঘুরতে আসছি! "
"এতো রাত্রি বেলা! ঘুরতে আইছেন!
আচ্ছা যাইবেন কই? " কৌতুহল
বাড়লো দোকানির।
"কই যাবো মানে! ঘুরবো ...আশেপাশেই
ঘুরবো। সকালে চলে যাবো!"
সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে না পাওয়ায়
অস্বস্তিবোধ করছে অপু।
"ঢাকা থেকে আসছেন! অথচ কই যাবেন
জানেন না! "
দোকানদার যেন খুব অবাক হলো। গ্রাম-
গঞ্জের লোকেরা অল্পতেই অবাক হয়।
তখন তাদের চোখের
দিকে তাকালে মজা পাওয়া যায়। অপু
মজা পাচ্ছে না। বিরক্ত হচ্ছে!
"এতকিছু জিজ্ঞেস করছেন কেন?
সমস্যা কি? " চায়ের কাপটা ঠাস
করে ট্রে তে রেখে দাড়িয়ে পড়লো অপু।
টাকা দিয়েই হনহন
করে হাঁটা ধরলো একদিকে। এই বাচাল
দোকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে।
কিছু দূর যেতেই খেয়াল হলো ওর,
'রাতটা কাটাবো কোথায়?'
আশপাশে চোখ বুলাতেই বোঝা গেলো,
একমাত্র ভরসা এখন বাচাল দোকানদার!
"ভাইজান ফিরা আসলেন যে!"
দেঁতো হাসিতে অদ্ভুত
লাগছে লোকটাকে! রাগ
চাপিয়ে হাসলো অপু।
"সরি ভাই!
আসলে রাতটা কোনমতে কাটানো দরকার।
সকালেই চলে ....."
"বুচ্ছি ভাই! বসেন। আপনি আমার
বাসাতেই থাকবেন। যদি আপনার
আপত্তি না থাকে।" দোকানির
কন্ঠে আন্তরিকতার ছোঁয়া।
"আপত্তি নাই! কিন্তু আপনি থাকেন
কোথায়? " অপু জিজ্ঞেস করলো।
ওর প্রশ্নের উত্তরে দোকানদার, দুই
হাতে ভর
দিয়ে নিজেকে খানিকটা পিছিয়ে নিলো।
দক্ষ হাতে সুন্দর
করে বিছিয়ে দিলো রোল
করা কাঁথা গুলো। ছোট্ট দোকানটা যেন
হয়ে গেলো সাধারণ একটা বিছানা!
এতক্ষণে অপু খেয়াল করলো, লোকটার
একটা পা নেই!
***
"ভাইজান, রেডি!
জুতাটা খুইলা আইসা পড়েন। "
অপু কিছুটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল।
একে তো অপরিচিত জায়গা তার উপর
অপরিচিত মানুষের সাথে দোকানের
ভিতর রাত্রি যাপন! বিসমিল্লাহ বলে ও
দোকানে ঢুকতেই ঝাপিটা ভিতর
থেকে ফেলে দিলো দোকান ঘরের
মালিক।
"ভাইজানের নামটা? "
"অপু। মোহাম্মদ অপু। আপনি? "
"আমার নাম রঞ্জু। নেন কলা রুটি খান। "
"না, না! আমি কিছু খাবো না। "
অসম্মতি জানায় অপু।
"আরে ধরেন! এখন আপনি আমার মেহমান!
"
রঞ্জু মেহমানের সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আর অপুর অবাক হওয়ার
মাত্রা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। কতই
না আন্তরিক এই মধ্য বয়সী গ্রাম্য
মানুষের দেঁতো হাসিটা।
সংকোচবোধ উপেক্ষা করেই
প্রশ্নটা করলো অপু,
"রঞ্জু ভাই! আপনার এই
অবস্থা হলো কিভাবে? "
"পায়ের কথা বলতিছেন? "
"জ্বী"
প্রশ্ন নিশ্চিত হয়ে খুব
করে একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেললো রঞ্জু।
এরপর শুরু করলো জীবনের গল্পের ছোট্ট
একটি অংশ।
***
রাত বাড়তে থাকলো।
বাড়তে থাকলো অপুর বিস্ময়।
অন্ধকার দোকানটায় যেন প্রজেক্টর
লাগানো হয়েছে! অপুর চোখের
সামনে হুটহাট করে ভেসে উঠছে সব,
"মেয়েটার নাম ছিলো সায়মা। পাশের
গ্রামেই বাড়ি। মাইয়াটার মা ওরে ছোট
রেখেই মইরা গেলো। কেউ কেউ
বলে সায়মার বাপই ওর
মা রে মাইরা ফেলছে! আসলে ওর
বাপটা ছিলো পিশাচ।
সায়মা তখন সবেমাত্র কলেজে।
আমি এইচএসসি ফেল দিয়া পড়ালেখা বাদ
দিছি। কলেজের কাছেই আমাদের
বাড়ি হওয়ায়
সায়মারে লুকায়া লুকায়া দেখতে খুব
সুবিধা হইতো আমার! মেয়েটা খুব
একটা ফর্সা ছিলো না। কিন্তু ওরে আমার
খুব ভালো লাগতো। সাহস করে গেছিলাম
অনেকদিন, কথা বলতে। কিন্তু
মাইয়াটা তেমন একটা পাত্তাই
দিতো না।
এইভাবে করে কেমনে কেমনে জানি বছর
ঘুইরা গেলো! একদিন সাহস
করে সরাসরি বইলা দিলাম যে,
আমি ওরে ভালোবাসি। উত্তরে কিছু
না বললেও মেয়েটা সেদিন কেমন যেন
খুশি হইয়া গেছিল! ওই শুরু হইলো আমাদের
ভালোবাসা। লুকায়া লুকায়া প্রেম করার
মধ্যে ব্যপক আনন্দ ছিল।
হঠাৎ একদিন সকালে কলেজ যাওয়ার
পথে সায়মা আমাকে বললো,
"রঞ্জু,
তুমি আমারে বিয়া কইরা ফালাও!"
আমি তখনও তেমন একটা কিছু
কইরা উঠতে পারি নাই। কি কারণে হঠাৎ
এই কথা, জিজ্ঞাসা করতেই ও
আমারে বললো,
'ওর আব্বা নাকি ইদানিং কেমন যেন
হয়ে যাইতেছে। পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছরের
বুড়া বাপ রাতে মদ খাইয়া আইসা মেয়ের
ঘরে ঢুকতে চায়! " ওর নাকি এইসব
ভাল্লাগতাছে না। আমি খুব চিন্তায়
পইড়া গেলাম।
ওরে সাবধানে থাকতে বইলা আমি কাজের
ধান্দায় লাগলাম।
এর কয়েকদিন পর থেকে প্রায়
সপ্তাহখানেক
ধরে কলেজে আসে না সায়মা। শেষমেষ
আর না পাইড়া ওর বাড়িতে গেলাম খোঁজ
নিতে। গিয়া দেখি জ্বরে মেয়েটার
গা পুইড়া যাইতেছে! অথচ ওর বাপের কোন
খোঁজ নাই! আমারে দেইখাই
সায়মা হাউমাউ
কইরা কাইন্দা দিয়া কইলো ,
'রঞ্জু তুমি পারলা না! রঞ্জু
তুমি পারলা না। "
ওর অবস্থা দেইখা আমি বুইঝা গেলাম,
খারাপ কিছু একটা হইছে। অনেক
জিগাইলাম, কি হইছে! কি হইছে! কিন্তু ও
আমারে কিছুই কইলো না। শুধু বুকের ভিতর
আইসা হড়হড় করে বমি কইরা দিলো। নিজ
হাতে ওরে সেদিন পরিস্কার
করে দিলাম।
মুচকি মুচকি হেসে পাগলীটা আমার চোখ
মুছে দিতেছিলো! আসার সময়
বলে আসছিলাম, "যেকোন সময়
কাজী অফিসে যাওয়া লাগতে পারে।
তুমি রেডি থাকবা" সায়মা চোখের
ইশারায় বইলা দিলো, থাকবে। সন্ধ্যার
দিকেই সায়মারে নিয়া এক মোল্লার
কাছে গেলাম। ওর
আব্বা বাড়ি না থাকায় বেশ
সুবিধা হইছিলো। কয়েকটা দোস্ত
আমারে খুব সাহায্য করছিলো। কবুল বলার
সময় অসুস্থ মাইয়াটার মুখটা যেন জ্বলজ্বল
করতেছিলো!
এইটা জানা কথা যে, পরদিন সকালে সব
জানাজানি হইতো। এজন্য ওকে সেদিন
রাত্রেই চইলা আসতে বললাম। আমাদের
প্লান ছিলো ঢাকা চইলা যাবো।
সায়মা কথা দিলো, সে আসবে। কিন্তু ওর
চোখে ছিল রহস্য।
কয়েকজন বন্ধুরে নিয়া রাইত এগারোটার
ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম।
সায়মাকে বলছিলাম মিনিট বিশেক
আগে আসতে। ও কথা রাখছিল। আসছিল
ঠিক আধাঘন্টা আগে। কিন্তু ঢাকায়
যাওয়ার জন্য না।
একেবারে চইলা যাওয়ার জন্য! "
"মানে কি! ক্লিয়ার করেন! " অস্থির অপু
দ্রুত তাগাদা দিলো। ঘটনার শেষটুকু
শুনতে টানটান উত্তেজনা ওর মধ্যে।
রঞ্জু আবার শুরু করলো,
"সাড়ে দশটার দিকে দূরপাল্লার
একটা সাদা ট্রেন যাইতেছিল এই স্টেশন
হয়ে। আমরা ওই
যাত্রী ছাউনিতে ছিলাম। ট্রেনের
বিরতিহীন হর্ণ
শুইনা আমরা সেদিকে তাকাইলাম,
দেখলাম একটা মানুষ
দাঁড়ায়া আছে রেললাইনের উপর। উজ্জ্বল
আলোতে আমার
চিনতে অসুবিধা হইলো না যে , এইটাই
আমার নতুন বউ। এইটাই আমার সায়মা। "
"তারপর?" অপুর কন্ঠে অধৈর্য একটা ভাব।
"তারপর আর কি! পাঁচ মিনিট হাঁটার
পথটাতে খুব জোরে দৌড়াইলাম। অল্পের
জন্য পৌঁছাইয়াও গেলাম। কিন্তু
পাগলীটার গায়ে সেদিন সেকি শক্তি।
পড়ে গেলাম আমিও। পা টা গেলো, তবুও
বেঁচে গেলাম। মরে গেলো আমার নতুন
বউটা। শালার ভাগ্য! বউটারে একটু আদরও
করতে পারলাম না।
ভাইজান! ঘুমাইলেন নাকি? "
অপু ঘুমায়নি।
ঘুমন্ত মানুষের চোখ বালিশ ভিজায় না।
সর্দি হলে মানুষ নাক টানে। অপু নাক
টানছে।
কষ্ট পেলে মানুষ কাঁদে।
কাঁদলে কিছুক্ষণের জন্য সর্দি লেগে যায়।
রঞ্জু বুঝে ফেললো, আগন্তুক
ছেলেটা এখনো ঘুমায়নি।
ঘুমন্ত মানুষ নাক টানে না।
***
ফজরের পর আর ঘুমালো না অপু।
আলো ফুটলেই আশেপাশে চোখ
রাখতে হবে। রাতের কথা মনে পড়তেই
জেগে উঠলো অপুর কৌতুহল।
"আচ্ছা, রঞ্জু ভাই! আপনি আর
বিয়ে করেননি? "
"নাহ্! বউ আমার একটাই ছিল।
মইরা গেছে! ব্যস " রঞ্জুর
কাঠখোট্টা জবাব।
"এত জায়গা থাকতে এরকম
একটা ফাঁকা জায়গায় দোকান দিলেন
কেন? ওইখানেও দিতে পারতেন! "
ছাউনির আশপাশের দোকান
গুলো দেখিয়ে, অপু বললো।
"এইখানে আমার বউয়ের স্মৃতি আছে।
আমার বিবাহিত জীবনের বয়স ১২। এই
দোকানটারও ঠিক তাই! বুচ্ছেন? "
"হুম বুঝলাম! "
রঞ্জুর গল্পে মগ্ন অপু কিছুক্ষণের জন্য
ভুলে গেলো আলো ফোঁটার কথা। ওর সব
মনোযোগ এখন চায়ের কাপে আর পুরাতন
সব স্মৃতির গল্পে।
***
শাড়ির কুঁচি ঠিকঠাক
করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো।
শেষবারের মতো আর রঞ্জু ভাইয়ের
চা টা খাওয়া হলো না। চুপচাপ
বেড়িয়ে পরলো মেয়েটা। বাসার সবাই
অলস ঘুমে মগ্ন।
গোলাপী রংয়ের
শাড়ি পড়া মেয়েটাকে খুব
মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। চেহারার
সাথে নামের এতো মিল
থাকতে পারে,এটা মিষ্টিকে না দেখলে বিশ্বাস
করা সম্ভব না।
মিষ্টি এখন রেললাইন ধরে হাটছে।
সাতটা পনেরতে ট্রেন যাবে। মিনিট
পাঁচেক দেরি হতে পারে। এখন
সাতটা বাজতে দুই মিনিট বাকি। গল্পের
মতোই হচ্ছে সব। এখন শুধু ট্রেনটা ঠিকঠাক
আসলেই হয়...।
আনমনা মিষ্টি কদম গুনতে গুনতে রঞ্জু
ভাইয়ের দোকানের দিকে চলে আসলো।
ট্রেনটাও আজ যেন একটু তাড়াতাড়িই
চলে আসছে!
***
রঞ্জুই আগে দেখলো মিষ্টিকে। আজ ওর
জন্য স্পেশাল চা হবে একটা, মেহমানের
উপলক্ষে। রঞ্জুর দেঁতো হাসির উৎসের
দিকে তাকাতেই অপুর খেয়াল হলো সব!
ট্রেনের তীক্ষ্ণ হুইসেল
হাসি মুছে দিলো রঞ্জুর মুখ থেকে।
মিষ্টি ওই দূরেই
দাঁড়িয়ে পরলো সাথে সাথে, মুখে তৃপ্তির
হাসি।
কনফিউশনে না ভুগে সাথে সাথে দৌড়
লাগালো অপু। দৈত্যটা বিকট
শব্দে এগিয়ে আসছে। মিষ্টি খুব মনোযোগ
দিয়ে দেখছিল ট্রেনটাকে। ওর
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটালো অপুর
চিৎকার।
ছেলেটা নায়কদের মতো দৌড়াচ্ছে! এই!
এসেই তো পরলো! এক সেকেন্ডের জন্য
মিষ্টি পুরোপুরি ভুলে গেলো ওর উদ্দেশ্য।
ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হলো ছেলেটার
অস্থির চেহারা।
এটাই অপুকে সাহায্য করলো। শেষ
পর্যায়ে এসে শূন্যে ঝাপিয়ে পড়ে মেয়েটাকে ধাক্কা দিলো সে।
পাথরে মাথা ঠুকে অজ্ঞান
হয়ে গেলো মিষ্টি। আর দুর্ভাগা অপুর
পরিণত হলো একজন রঞ্জুতে।
***
"মেয়েটাকে ঠেলে দিতেই আমি লাইনের
উপর আছড়ে পড়লাম। উঠতে গেলাম ,আর
দেখি শালার কনভার্সটা কিসে যেন
আটকে আছে। ব্যস....."
বন্ধু আজহারকে বলছিলো অপু।
"কিন্তু হাসপাতালে আইলো না কেন
মাইয়াটা? " আজহার রাগান্বিত!
"ওই শালা! পরদিনই তো চলে এলাম যশোর
থেকে! "
"ও আচ্ছা! তা ফেসবুকে এখন কি অবস্থা?"
আজহারের এমন প্রশ্নের উত্তর জানার
আগে পিছিয়ে যেতে হবে একটা বছর।
***
কাছ থেকে একবার
মৃত্যুকে দেখে ফেললে বেঁচে থাকাটা খুব
আনন্দের হয়ে যায়। মিষ্টির এই আনন্দের
মধ্যেও অপরাধবোধ কাজ করছে। সেদিন
জ্ঞান ফেরার পর অনেক
খোঁজা হয়েছে ছেলেটাকে। কল্পনায়
ভেসে থাকা চেহারা ছাড়া আর কোন ক্লু
না থাকায় পাওয়া গেল না তাকে। অথচ
প্রতিদিন কতশতই না কথা হয় তাদের!
পা কেটে ফেলার পরেও কষ্ট পায়নি অপু।
কারণ রহস্যময়ী বাচাল কাব্য আবার
ফিরে এসেছে। সেদিনের বেঁচে যাওয়ার
ঘটনা 'আমি স্বপ্ন' আইডির সাথে শেয়ার
করে মিষ্টি। ঠিক যেন মায়ের
কাছে মাসির গল্প!
আত্নহত্যার ব্যপারটা ওই
ছেলেটা কিভাবে জানলো! এই নিয়ে ওর
কৌতুহলের শেষ নেই। তবে কিছুতেই মুখ
খোলেনি অপু। ওর আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব
আর জীবনকে নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ
থেকে দেখার
পরামর্শে মিষ্টি নিজেকে নতুন
ভাবে আবিস্কার করে। আর অনুভব করে ওই
অ্যানোনিমাস আইডির প্রতি প্রচন্ড টান।
কথায় কথায় একদিন জিজ্ঞেস করে অপু,
-আচ্ছা, ওই হিরোটার
প্রতি তুমি কি কৃতজ্ঞ?
-কৃতজ্ঞ না ছাই!
ব্যাটা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেলো!
জীবনের মানে তো তুমিই শিখালে।
তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
-ওই! ও
যদি তোমাকে না বাঁচাতো তাহলে আমি তোমাকে লেকচার
ঝাড়তাম কিভাবে? স্বার্থপর
হচ্ছো কিন্তু তুমি!
-তা অবশ্য ঠিক! কিন্তু ওর
ব্যপারে তোমার এতো কি? হ্যাঁ!
-ধুর! কিছু না। আচ্ছা ওই ছেলেটা তোমার
কাছে আসলে তুমি কি করবা?
আনমনা হয়ে যায় মিষ্টি। সেই অস্থির
চেহারা চোখে বৃষ্টি নামায়। লোকজন
বলেছে, ছেলেটার
একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বলদ
একটা। তবে সব ছেলেরাই একরকম হয় না।
পুরোনো প্রেমিকের কথা ভাবতেই
রেগে উঠে মিষ্টি!
অপুকে রিপ্লাইটা দিয়েই ল্যাপটপ বন্ধ
করে দেয় সে।
-থাপ্পড় দিবো একটা।
অপুর ঠোঁটে ঝুলে আছে মুচকি একটা হাসি।
***
ফেসবুকের অবস্থা থাপ্পড়েই শেষ হয়নি।
অপু থাপ্পড় খাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া,
সঙ্গে স্ক্র্যাচ দুটো। এক বছর পর আবার
দেখা হচ্ছে ওদের। দুই ভাগ
হয়ে গেছে অপুর মন। একভাগে শুধুই
ভালোবাসা। আরেক ভাগে নিজের
অক্ষমতা আর বাস্তবতা মেনে নেয়ার
শক্তি।
***
গোলাপী রংয়ের
শাড়ি পড়া মেয়েটাকে খুব
মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। চেহারার
সাথে নামের এতো মিল
থাকতে পারে,এটা মিষ্টিকে না দেখলে বিশ্বাস
করা সম্ভব না।
মেয়েটা আজও রেললাইন ধরে হাটছে।
স্বপ্ন গুলো বাঁচিয়ে দেয়া স্বপ্নবাজের
জন্য অপেক্ষা ...। উনি "স্বপ্ন"।
ট্রেনটা থেমে যাচ্ছে।
থেমে যাচ্ছে মিষ্টির হৃদস্পন্দন!
বেশি উত্তেজনায় ঘুম ঘুম লাগে মিষ্টির।
ঘুমের মধ্যেই নাকি স্বপ্নেরা আসে!
কই! ও তো আসছে না! রাগ
হতে লাগলো মিষ্টির। ফোন অফ!
ট্রেনটা আবারও যাত্রা শুরু করলো। শুধু
থেমে থাকলো যাত্রী ছাউনিতে বসে থাকা কান্নারত
মেয়েটা, আর তার কাঙ্খিত সেই স্বপ্ন!
***
উঠে দাঁড়াতে গিয়েই
চোখে পরলো ছেলেটাকে। স্ক্র্যাচে ভর
দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটা,
অস্থির একটা চেহারার মালিক। সেই
দৌড়ে আসা ছেলেটা একটুও বদলায়নি।
মনের রেললাইন ধরে কি জোরেই
না দৌড়াচ্ছে স্বপ্নটা! মিষ্টি বারবার
মুগ্ধ হয়।
"একটা বছর এভাবে কষ্ট দিলা কেন?"
গোল গোল চোখ দুটোতে যেন শ্রাবণ ঢল
নেমেছে।
"আমিও তো কম পাইনি! এছাড়াও
আমি তো এখন ......"
"তোমার গালটা আগাও। ডান গাল! "
অপুকে বাঁধা দিয়ে মিষ্টির হুকুম।
থাপ্পড়ের ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায়
ভুগছে অপু!
হালকা ওজনের থাপ্পড়ে বিস্ময়ে বিমূঢ়
হয়ে গেলো ছেলেটা। ঠোঁট দিয়ে এমন
থাপ্পড় শুধু অতৃপ্তি বাড়ায়। তবুও চুপচাপ
থাকাটাই বোধহয় শ্রেয়।
চুপ থাকার ফলাফল মিললো হাতেনাতে।
গোলাপী মিষ্টি স্বপ্নের
সাথে মিশে যেতে চাইছে। স্ক্র্যাচ
দুটো ফেলে দিলো অপু। ভালোবাসার
মানুষের উপর বিশ্বাস করা যায়।
বিশ্বাসের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকার
জন্য স্ক্র্যাচের প্রয়োজন নেই।
***
দূর থেকে রঞ্জুর চোখ ওদের দুজনকে একজন
ভেবে ভুল করছে। তবে মন কখনো ভুল
করে না। এদিকেই আসছে ওরা।
ঝাপসা চোখে সব দেখতে পাচ্ছে রঞ্জু।
ঈর্ষাযুক্ত নোনা পানিতে গাল
ভিজে যাচ্ছে তার। নাহ্!
বয়সটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না।
চোখের সাথে মনটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
কাপ রেডি করলো রঞ্জু। স্পেশাল দু কাপ
চা হবে আজ। খুব স্পেশাল।
ওরা এসে পড়েছে।
সস্তা অনুভূতি মেশানো চায়ের
কাপে গভীর চুমুক দিয়ে তৃপ্ত একটি জুটি।
আর পুরাতন সেই প্রেমিক বারবার চোখের
সমস্যায় জর্জরিত।

ভালবাসার গল্প

এই কি করিস ?
-চুপ থাক !
-আচ্ছা ! গার্লফ্রেন্ড পেয়ে ফ্রেন্ড কে ভুলে গেছিস ?
-ফুট ! এখন বিজি !
-এখন ফুট ! থাক তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে ! আমি গেলাম !
লিয়া অফ লাইনে চলে যায় ! অপু মেসেঞ্জারের উইনডো থেকে চোখ ফেসবুকের ম্যাসেজ উইন্ডোর দিকে নিয়ে এল । ওখানে ততক্ষনে গোটা কয়েক মেসেজ চলে এসেছে !
-এই তুমি কোথায় ?
-এই কোথায় ?
-কোথায় গেলে ?
-ভুলে গেছো আমাকে ? কার সাথে কথা বলছো ?
অপু হাসে কেবল ! তাড়াতাড়ি রিপ্লে দেয়
-এই তো আমি পাখি ! এই তো ! কোথায় যাই নি তো !
-তাহলে রিপ্লে দাও না কেন ? হুম ?
-দিতেছি পাখি !
-হুম !!!
-আই লাভ ইউ !
-হবে না । আবার বল !
-আই লাভ ইউ !
-হুম । হয়েছে ! আই লাভ ইউ !
অপুর মন টা আজ অনেক বেশি ভাল । অনেক বেশি । আজ কত দিন পরে এই কাঙ্খিত লাইনটা ও বলতে পারছে । এমন কি সেই মেসেজটার রিপ্লেও আসতেছে । বারবর বলতে ইচ্ছে করছে । অপুর কেবল মনে হচ্ছে সারা দিনই যেন কথা বলুক ওকে !
-এই শুন !
-হুম শুনছি ।
-এখন ঘুমাবো ?
-আমিও ঘুমাবো ! আমার সাথে ঘুমাবা ?
-দুষ্টামী করবা না !
-করবো ! তোমার সাথে দুষ্টামি করবো না তো কার সাথে করবো ?
-হুম ! হয়েছে ! এখন রাখো !
-না ! তুমি যাবা না ! তুমি যাবা বলে দিলাম !
লিয়া অপুর পাগলামো দেখে হাসে । ছেলেটা কি পাগলামো শুরু করেছে । এমন একটা ভাব যেন ও সত্যি সত্যি ওর টিয়া পাখি ! এমন পাগলামো কেন করছে । সেই ১২ টার দিক থেকে ওদের চ্যাটিং শুরু হয়েছে এর ভিতর ছেলেটা অন্তত হাজার বার আই লাভ ইউ লাইনটা বলেছে ! এমন কেন করছে ছেলেটা ?
অপুকে বাস্তবে খুব একটা চিনে না লিয়া । কেবল অনলাইনেই পরিচয় । প্রথমে ব্লগ পড়তো ! তারপর ম্যাসেঞ্জারে । এখন ফেসবুকে ।
লিয়া খুব বেশি অন লাইনে থাকতো না । একদিন এক বন্ধুর ফেসবুক শেয়ার একটা ব্লগ পোষ্ট দেখে প্রথম ছেলেটার ব্লগে ঢুকে লিয়া ।
লিয়ার এখনও মনে আছে গল্পটার নাম ।
সাইনবোর্ড । একটা মেয়ে ছেলের বাড়ির সামনে একটা সাইনবোর্ড নিয়ে হাজির । তাকে বিয়ে করতে হবে । তারপর ঘটতে থাকে মজার কত গুলো ঘটনা ।
গল্পটা পড়ে লিয়ার মন চট করেই ভাল হয়ে গেল । ওর মন টা কদিন থেকেই বেশ খারাপ ছিল । গল্পটা পড়ে আসলেই ভাল লাগলো ওর । তারপর থেকেই ছেলেটার ব্লগে নিয়মিত হয়ে গেল ! একটা অবাক হওয়া বিষয় ও লক্ষ্য করলো যে ছেলোর পুরো ব্লগ জুরে সব আজগুবি ভালবাসার গল্পে ভরা । কিন্তু আজগুবি হলেও গল্প গুলো পড়লে মন ভাল হয়ে যায় !
আর সব থেকে বড় কথা ছেলেটা সব সময় হ্যাপি এন্ডিংয়ের গল্প লেখে । নিশ্চই ছেলেটার জীবনে কোন কষ্ট নাই ! এই জন্য মনে হয় সব সময় এমন আনন্দের গল্প লিখতে পারে !
এই শুনো !
-হুম !
-আকলে অনেক দেরি হয়ে গেছে !  এখনই ঘুমাতে হবে নয়তো আম্মু বকবে !
-তোমার আম্মু জেগে আছে ?
-না ।
-তাহলে ? সে কিভাবে জানবে ?
-যদি চলে আসে ?
-আসবে না ! আমি বললাম !
-কিভাবে জানো যে আসবে না !
-আমি সব জানি !
——–০———
বৃক্ষের সাথে আমার পরিচয় খুব সাধারন ভাবেই । অল্প কিছু মানুষ আমার লেখা পড়তো তার ভিতর সে ছিল ! আসলে আমি প্রথমে জানতামই না যে ও আসলে একজন মেয়ে ! যেদিন থেকে জানলাম সেদিন একটু অবাক হয়েছিলাম !
আস্তে আস্তে ওর সাথে পরিচয় হয় ! প্রথমে আমাদের মেসেঞ্জারে কথা হত । আমি আমার কথা গুলো বলতাম । ও বলতো ওর কথা গুলো ! আমরা দুজনেই কষ্টে ছিলাম ! কেবল দুজনের কষ্টের কথা গুলো শেয়ার করে নিতাম একে অপরের সাথে ।
মনের ভিতর একটা শান্তি লাগতো ! ওর সাথে কথা বলেই একটা গল্প লিখেছিলাম অপরিচিতার সাথে কথপোকথন !
এভাবেই দিন যাচ্ছিল কেটে ! তারপর একদিন অদ্ভুদ একটা কাজ করলাম আমি । কেন করলাম ঠিক বলতে পারবো না ! কিন্তু করলাম !
টিয়াপাখি নামের আমার একটা ফেইক আইডি খোলা ছিল । ঐ আইডিটা আমি নিজের সান্তনার জন্য খুলে ছিলাম । যখনই মন খারাপ হত আমি টিয়াপাখি আইডিটাতে মেসেজ পাঠাতাম । ওর ওয়ালে কত কিছু লিখতাম ! কোন কারন নাই । এমনিই লিখতাম ! কোন দিন সেগুলোর জবাব আসতো না ! একদিন সেই আইডির পাসওয়ার্ডটা আমি বৃক্ষ্যকে দিয়েদিলাম !
ও আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমি আমি কেন ওকে আইডিটা দিলাম আমি কোন উত্তর দিতে পারি নি !
তারপর ……
বৃক্ষ্য সেই আইডি দিয়ে আমার সাথে প্রথম চ্যটিং করলো !
বুকের ভিতর কেমন লাগছিল আমি বলে বোঝাতে পারবো না । আমি আই লাভ ইউ বলছি আর সেইটার উত্তর আসতেছে ! আমার আর কিছু জানার দরকার ছিল না । আমি সেদিন কত বার যে কথাটা বলেছিলাম আমি জানি না ! সেদিন আসলেই এমন কিছু হয়েছিল । মেসেঞ্জারে বৃক্ষ্য রয়েছে আর ফেসবুকে টিয়াপাখি ! যদিও দুজনই একই মানুষ !
তারপর এমন হয়ে গেল যে সারা দিন ফেসবুকে মেসেজ পাঠাই ! মেসেজের রিপ্লে না আসলে ভাল লাগে না ! মনের ভিতর শান্তি পাই না । কোন উপাই না দেখে ওর কাছে মোবাইল নাম্বার চাইলাম । প্রথমে দিতে চাইলো না । তবুও কল না করার সাপেক্ষে ফোন নাম্বার দিল । কিন্তু তাই কি হয় ?
একদিন সকালে ও নিজেই আমার কাছে ফোন দিল ! প্রথমে আমি ঠিক মত চিন্তে পারি নি । মনে হচ্ছিল ১২/১৩ বছরের কোন বাচ্চা মেয়ের সাথে কথা বলছি ! কন্ঠে একটা আদুরে আদুরে ভাব ! অবশ্য এখনও আমার তাই মনে হয় ! বৃক্ষের মোবাইল ভয়েস আসলেই বাচ্চাদের মত ।
সেদিন কি বলেছিলাম আমার নিজের মনে নাই । আসলে ঘুমের ঘোরে কি বলেছি আমার ঠিক মত মনে নেই । তবে বলে আমি নাকি খুব ভাব নিয়ে কথা বলছিলাম । কে জানে !
এভাবেই ওর সাথে কথা হতে থাকে । কথা বলতে বলতে ওর কত খানি কাছে চলে গেছি আমি কোন দিন বুঝিও নি ! এমনও হয়েছে আমরা ফোনে কথা বলছি আর সাথে চ্যটিং করছি ! যে কথাটা মুখে বলতে পারছি না সেটা ইনবক্সে বলছি ! কয়েকদিনের ভিতরই ইনবক্সের আই লাভ ইউ মুখে চলে এল !
আমরা সারা দিন কথা বলতাম । আমি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম এতো কথা আমি কিভাবে বলি ! সে ততদিনে টিয়াপাখি আইডি থেকে অপুর হৈম আইডি তে চলে এসেছে ।
তখন অবশ্য অনেকেই মনে করতো যে অপুর হৈম আইডিটাও আসলে আমারই তৈরি ! আমি বেশি কিছু বলি নি !
ও হ্যা ! আর একটা কথা । ওর ব্লগার বটবৃক্ষ আইডিটাও আমি খুলে দিয়েছি ! ঠিক খুলে দিয়েছি বললে ভুল হবে । আগে যে টিয়াপাখি আইডিটা ছিল সেইটা নাম বদলে ব্লগার বটবৃক্ষ করেছি !
এভাবেই দিন যাচ্ছিল ! ও একবার অপুর হৈম দিয়ে আমার পোষ্টে কমান্ট দিতো আবার ব্লগার বটবৃক্ষ আইডি তে । আমার মজাই লাগতো !
তারপর একদিন ও বলল যে এই ভাবে কথা বলাটা ঠিক হচ্ছে না । আমাদের কথা বন্ধ হওয়া উচিৎ ! তারপর ও কথা বলা বন্ধ করে দিল ! আমিও অভিমান করে কথা বললাম না ! সাতদিন পরে ও নিজেই আবার আমার কাছে ফোন দিল ! ফোন দিয়ে একটু অভিমান কন্ঠে কত কিছু বলল ! আমি কেবল মনে মনে হাসি !
এই সিম্পল কাহিনী আমাদের ! এতোদিন ব্লগে আমি কেবল বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখেছি । মানুষের গল্প লিখেছি ! আজকে আমার প্রেম কাহিনী বলে দিলাম !
আসলে আমি গত প্রায় দুই সপ্তাহ দিয়ে এই গল্পটা লেখার চেষ্টা করছিলাম ! কত ভাবে ভাবলাম ! কত ভাবে ট্রাই করলাম । কিন্তু মন মত হল না ! কেন হল না জানি না ! একবার ভাবলাম লিখবোই না কিন্তু সামনের কথা বলা যায় না । তাই লিখে দিলাম ।

একটি অন্যরকম ভালবাসার গল্প 22L


(গল্পের সব চরিত্র, স্থান, কাল এমনকি পুরো গল্পটিই কাল্পনিক। কোন ব্যক্তির সাথে এর কোন মিল থাকলে লেখক দায়ী নয়।)
গতকাল আমাদের নতুন বাসার কাজ শেষ হল। বাসায় মাল-পত্র ওঠানো হচ্ছে। আগে থাকতাম টিনশেডের ১তলা বাসায়। সেটি ভেঙ্গে ২তলা দালান করা হয়েছে। উপর তলায় আমরা থাকব আর নিচ তলা ভাড়া দেওয়া হবে।
১ সপ্তাহ পর…………….
স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার সময় দেখি বাসার সামনে রাস্তায় ১টি অচেনা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। এই মেয়েকে আগে এই মহল্লায় দেখি নাই। হইতবা নতুন এসেছে। দেখতে মোটামুটি সুন্দর। আমি ছোটকাল থেকেই বেপরোয়া টাইপের ছেলে। অত্যন্ত জেদি। কোনদিনও কোন মেয়ের দিকে সেরকম ভাবে তাকায় নি। আসলে আমি মেয়েদের দেখে কোনদিনও কোন প্রকার আকর্ষণ অনুভব করি নি। বাসায় যতক্ষণ থাকি কম্পিঊটার আর টিভি। বাইরে গেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এই মেয়েকে দেখেও সেরকম কোন অনুভুতি পেলাম না। শুধু ১টু কৌতূহল জাগল। এই এলাকার সব মেয়েকে চিনি, কিন্তু এ কে। অবশ্য পরদিন সব ই জেনে গেলাম। ঐদিন বাসায় গিয়ে দেখি নিচ তলায় মালামাল উঠানো হচ্ছে। বুঝে গেলাম বাসা ভাড়া হয়ে গেছে। তারপরও উপরে গিয়ে আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আম্মা, বাসা ভাড়া হইয়া গেছে’। ‘হ, অই তুই ইকটু নিচে জাইয়া দেইখা আসতি সব ঠিকঠাক উঠাইতেসে কিনা’। ‘নাহ, এখন জামু না। পরে জামু নে’। ‘হ, জাইয়া দেইখা আসিস’। কিন্তু যাওয়া আর হলনা। স্কুল থেকে আসি বিকাল সাড়ে পাঁচটাই। শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। তাই আর বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না। স্কুল শুরু হয় ১২.৩০ এ। নবম শ্রেণীতে উঠেছি এইবার।
পরদিন ভোরবেলা চেচামেচিতে ঘুম ভাঙল। ঘড়িতে দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে। এত ভরে আমি কখনই উঠি না। বুঝতে পারলাম চেঁচামেচি নীচতলায় হচ্ছে। আমার খাটটা জানালার পাশে। তাই বাইরের যেকোনো শব্দ একেবারে গাড়ির হর্নের মত ঘরে ঢোকে। চেঁচামেচিটা হচ্ছে একটি মেয়েলি গলার। আমি মনে মনে ভাবছি এরকম ডাইনীর মত গলা কার যে আমার এত আরামের ঘুম টা ভেঙে দিল। ৮টার আগে আমার কোন দিনও ঘুম ভাঙ্গে। মাঝে মাঝে আব্বুর ডাকে ৭টায় উঠতে হয়। কিন্তু এত আগে কখই না। সকালবেলা
আধঘণ্টা ঘমানো অনেক আরামের। আসলে গলাটা অতটা খারাপ না যতটা আমি বলছি। কিন্তু আমার রাগ উঠে গেলে কোকিলকে কাক ডাকতে আমার কোন সমস্যা হয় না। ব্রাশ করতে করতে ঘর থেকে বের হতেই আম্মা আমাকে দেখে থ মেরে গেল। যেন ভূত দেখেছে। আমি বললাম, ‘কি আম্মা, ভূত দেখলা নাকি’। ‘নারে, ভাবতাসি সূরয কি পশ্চিম দিক দিয়া উঠল নাকি’। ‘আরে নাহ, সূরয ঠিক জাইগা দিয়াই উঠছে। খালি আমিই ভুল সময় উইঠা গেছি আরকি’। ‘অ, তাইই ত দেখতাসি, তা আজ এত সকালে কি মনে কইরা উঠলি’। ‘আগে কউ নিচতলাই কি ডাইনি ভাড়া দিসো’। ‘হায় হায়, সাওয়াল কই কি। ডাইনী ভাড়া দিমু কেন, মানুষই ভাড়া দিসি। ক্যারে, তোর কোন সমেস্যা হইসে ’। ‘খালি নাকি, দ্যেহনা আমার এই সাধের ঘুম খান ভাইঙ্গা দিল’।
‘ও, এই সমস্যা। আসলে ওর স্কুল এই সময়ত তাই একটু চেঁচামেচি করতাসে’। ‘কার স্কুল?’।‘আরে নিচতোলার ওই মাইয়াডা, ফারিয়া’। ‘বাহ বাহ, নামডাও দেহি জাইনা গেস। তা কোন ক্লাসে পরে? কোন স্কুলে?’। ‘এইট এ পরে। গভমেন্ট গার্লস স্কুলে’।‘ও, তা এরকম ডাইনীর মত গলা বানাইসে কিভাবে? আজ আমারে ঊঠাইসে, কাইল এলাকারে উঠাই দিবে।’। ‘চোপ থাক, ১বাপের ১ মাইয়া। যা চাই তাই পাই। তোর নামে জানি কোন কমপ্লেইন না শুনি। ওই মাইয়ার থেইকা দূরে দূরে থাকবি’। ‘এহ, খাইয়াতো কাম নাই। তুমি ওই মাইয়ারে আমার থেইকা দূরে দূরে থাকপার কইও।’। ‘কি, বাঁদরামি শুরু করসিশ না। তোর বাপরে ডাক দিব কইলাম’।‘আসসা আসসা, যাও, আমি অই মাইয়ার ত্রিসীমানাই যাবান না। কিন্ত তুমি ওই মাইয়ারে আমার থেইকা দূরে দূরে থাকতে কইও। এহন মুখ ধুইতে যাইতে দাউ, সরো’। আমি মুখ ধুতে বাথ রুমে চলে গেলাম। আমি আবার আব্বারে জম্মের ভয় পাই। আব্বার চোখ দেখলেই ভয় করে। আব্বার কথা না উঠাইলে আম্মার সাথে আরও কিছুক্ষণ তর্ক করতাম। সকালে প্রায় ৯টার দিকে কলিংবেলের শব্দ হল। আম্মা রান্না ঘর থেকে বললেন, ‘আবির, দরজাটা খুলত। দেখ কে আইসে’। আমি দরজা খুলে দেখলাম আম্মার বয়সী ১জন মহিলা। বুজতে পারলাম ইনি নিচতলার নতুন ভাড়াটিয়া। ওনাকে দেখেই সালাম দিলাম, ‘আসসালা-মু-আলাইকুম আনটি, ভেতরে আসেন’।‘অয়ালাইকুমুসসালাম। তোমার নাম কি বাবা?’।‘জী, আমার নাম আবির। আপনি ভেতরে আসুন’।‘তোমার আম্মু কই, ১টু ডাকতে পারবা তাকে?’।‘অবশ্যই। আপনি ভেতরে আসুন। বশুন’।ওনাকে বসিয়ে আমি আম্মাকে ডাকতে গেলাম। আম্মা এসেই ওনার সাথে গল্প শুরু করে দিল। যে নাকি এত ব্যস্ত যে দরজা খুলতে বাইরে আসতে পারে না, আর একে দেখেই গল্প শুরু করে দিল। আম্মাকে দেখেই আনটি আমার গুণগান করতে লাগল। বুজতে পারলাম এই মহিলা তেল দেওয়াই এক্সপার্ট। কিন্তু আমাকে এত সহজে গলাতে পারবে না। আমি আমার রুমে চলে গেলাম। প্রায় ১২টাই আবার কলিংবেল। আম্মা আবার চিল্লায়ে দরজা খুলতে বললেন। ভাবছিলাম যাব না। কিন্তু ঘরে মেহমান অর্থাৎ আনটি এখনও যান নি। এখন এরকম ব্যাবহার করলে কেমন দেখায়। তাছাড়া স্কুলে যাব না বলে আমার উপর আম্মা প্রচণ্ড রাগান্বিত। এখন আরও রাগাইলে আমার দুপুরের খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অগত্যা আমারেই দরজা খুলতে হইল। দরজা খুলতেই দেখি গতকালের সেই মেয়ে। আমাকে দেখে মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে। বুঝতে পারলাম এই তাহলে সেই মেয়ে যে আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করেছে। তবে স্কুল ড্রেসে তাকে কালকের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। আমি সাধারন ভাবেই বললাম, ‘কি চাই?’।‘আমার আম্মু মনে হয় আপনাদের বাসায় এসেছে। একটু ডেকে দিবেন?’। ‘আমি তো তোমার আম্মুরে চিনি না। আর তুমিই বা কে?’। ‘জী, আমরা গতাকাল নীচতলায় উঠেছি।’।‘ও, খারাও। ডাক দিতিসি তোমার আম্মারে। তুমি ভেতরে আইসা বস।’। ও ভেতরে এসে বসল। আমি আনটিকে ডাক দিলাম।আম্মা আর আনটি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন।তারপর কিছুক্ষণ সোফায় বসে গল্প করলেন। আমি আমার রুমে চলে গেলাম । আমার কম্পিউটার টেবিল থেকে গেস্ট রুম ভালভাবে দেখা যায়। দেখলাম মেয়েটি কিছুক্ষণ পরপরই আমার রুমের দিকে তাকাচ্ছে। চোখে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। কিছুক্ষণপর আনটি তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন। তারা যাওয়ার পর আমি আম্মাকে বললাম, ‘তাইলে এইডাই সেই ডাইনী’। ‘ভালভাবে কথা ক। উনারা শুনতে পারলে কি মনে করবে’। ‘যে আমার এত সাধের ঘুম ভাংসে সে ডাইনী ছারা আর কি’। ‘দারা, তোর আব্বা আইসা নিক। তখন মজা টের পাবি’।‘আম্মা, তুমি কথায় কথায় খালি আব্বার ভয় দেখাও কেন কউ তো।’। ‘কারন তুই খালি তোর আব্বারেই ভয় পাশ’। আমি আর কোন কথা বললাম না। বুঝতে পারসি এরপর আরও তর্ক করতে গেলে বাশ খেতে হবে।
পরের দিন আবারও সেই চেঁচামেচি। নাহ, আর সহ্য করা যায় না। লাফাইতে লাফাইতে ঘর থেকে বের হলাম। আম্মাকে ডেকে কিছুক্ষণ অনেক চিল্লাচিল্লি করলাম। তারপর বললাম এরপর থেকে এরকম করলে আর সহ্য করব না। আমি নিজেই নিচে যাইয়া কথা শোনাই দিয়ে আসব। আম্মা বলে, ‘ভালোয় তো।সকালে উঠাই তো ভাল।’। ‘তোমার কাছে ভাল কিন্ত আমার কাছে না। তুমি আজ ওই মাইয়ারে মানা কইরে দিবা। নাইলে কিন্তু খবর আছে’। আম্মা আমার রাগ জানে। তাই আর কথা বললেন না। ঐদিন আর দেখা হইল না ওই মেয়ের সাথে। পরদিন সকালে কোন চেঁচামেচি শুনলাম না। মানে আম্মা বলে দিয়ে আসছে। ঐদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখি ওই মেয়ে আমার ঘরে।আমার চেস্ট পুলার টা টানাটানি করছে। আমাকে দেখতে পারে নাই। আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম, ‘ওইটা মেয়েদের কোন কাজে লাগে না। ছেলেদের ব্যাম করার জিনিস’। ও আমার কথা শুনে লাফিয়ে উঠল। দোর দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। লজ্জায় না ভয়তে বুঝতে পারলাম না। আমি কোন কিছু না ভেবে গোছলে ঢুকে গেলাম। গোছল শেষে বাথরুম থেকে বের হয়েছি গামছা পরে। খালি গা। আম্মাকে ডাকতে নিজের রুম থেকে বের হতেই দেখি ও গেস্টরুমে সোফায় বসে আছে। ওকে দেখে প্রচণ্ড লজ্জা পেলাম। অচেনা মেয়ে আমাকে গামছা পরা, খালি গা অবস্থায় দেখে ফেলেছে। দেখলাম ও মিটিমিটি হাসছে।আম্মাকে ডেকে যত তারাতারি সম্ভব নিজ রুমে ঢুকে গেলাম। আম্মা ঘরে ঢুকতেই চেচিয়ে উঠলাম, ‘আচ্ছা তুমি কি কও তো, রুমে ও বইসা আছে আমারে কইতে পার না। আমি খালি গায় বাইর হইয়া দেখি ও বইসা আছে’। ‘বারে, তুই কি মাইয়া মানুষ নাকি। খালি গায় দেখছে তাতে কি হইছে’।‘আরে, আমার এই চাঙ্গা বডি দেইখা ফেললো।’।‘এহ, খাওয়া দাওয়া করস না, আবার কয় চাঙ্গা বডি।’।‘যাই হক, ও আমার রুমে ঢুকছিল কি করতে’।‘কি করতে আবার, রুম দেখতে’। ‘এত থুইয়া আমার রুমটাই পছন্দ হইল’। ‘হবার পারে’। ‘আচ্ছা যাই হক, আমারে খাবার দাও। খুব খিদা লাগছে। আর ও কি চইলা গেছে।’।আম্মা বলল, ‘হ, তারতারি খাইতে আয়। পেটটাতো একেবারে পিঠের সাথে মিশা গেছে’। ‘হুম যাই, তুমি তারাতারি ভাত মাখাও।’।
এভাবেই চলতে লাগল দিন কাল। মাঝে মাঝেই চোখাচোখি হয়। হালকা কথা হয় । তবে ১টা সময় নিয়মিত কথা হয়,ও যখন ওর মাকে ডাকতে আসে আর আমি দরজা খুলি। এইটা একটা রুটিনের মত হয়ে গেছে। প্রায় প্রত্যেক দিন এই কাজ করতে হয়। এভাবেই সময় কাটতে লাগল। দেখতে দেখতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলে আসল। ভাগ্য ক্রমে আমাদের দুজনের পরীক্ষাই দুপুরে, ২টাই। এমনই একদিন পরীক্ষা দিতে বের হয়েছি সাইকেল নিয়ে। বাসার সামনে রাস্তায় দেখি আনটি ওকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাদের এলাকার ১টা দোষ আছে। তা হল দুপুরে এই এলাকায় ১টাও রিকসা পাওয়া যাও। ভাগ্য ক্রমে যদি পাওয়া যাও তাও যেতে চাই না। আজ মনে হয় আনটি কোন রিক্সা পাচ্ছেন না। আমাকে দেখে আনটি বললেন, ‘আবির বাবা, তুমি একটু ফারিয়াকে স্কুলে নামায় দিয়া আসবা। দেখ না, ১টাও রিক্সা পাইতাসি না’।‘উম, ঠিকাসে। সমস্যা নাই।’।‘এই ফারিয়া, যাহ ওর সাইকেলে উঠ’। ও সাইকেলে উঠে পরল। ও মনে হয় খুসি হয়েছে। আমার স্কুলে যাওয়ার পথে ওর স্কুল পরে। প্রথমে আমাদের রাস্তা থেকে বড় রাস্তায় যেতে হয়। সেখান থেকে সোজা গেলে স্কুল। বড় রাস্তায় অনেক রিক্সা। ও বড় রাস্তায় উঠে বলল, ‘থাক, আমাকে আর নিতে হবে না। আমি এখন রিক্সায় যেতে পারব।’।আমি বললাম, ‘নাহ, আনটি তোমাকে স্কুল পর্যন্ত নিয়ে যেতে বলেছেন।আমাকে তোমার দায়িত্ব দিছেন। আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে’।‘তাই? যদি সারা জীবন এই দায়িত্ব পালন করতে বলে তাহলে করবেন?’। ‘করবোনা কেন। অবশ্যয় করব’। ও চুপ করে গেল। একি, আমি কি বলে ফেললাম। এ মেয়েতো আমাকে কথার জ্বালে আটকিয়ে ফেললো। এখন কি করার। যা ১বার মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে তা কি আর ফেরত আনা জায়।মনে মনে ভাবছি, এইটে পড়া মেয়ের মাথায় বুদ্ধি কত। আর আমি বোকার মত কি বলে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর আমিই নীরবতা ভাংলাম।‘এই শোন। আমাকে আপনি বলবা না ঠিকাছে। কেমন জানি বুড়া বুড়া লাগে’।‘কিন্তু আপনি তো আমার চেয়ে বড়।’। ‘বড় হলেই কি আপনি বলতে হবে নাকি। তবে ভাইয়া বল কেমন।’। ও কোন কথা বলল না। ও মনে হয় আমাকে ভাইয়া বলতে নারাজ। আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই ওর স্কলের কাছে চলে আসলাম। ও নেমে ভেতরে চলে গেল। আমার দিকে তাকালও না। বুঝলাম না কি হল। থাক, আমি আমার কাজে যায়, মানে পরীক্ষা দিতে যাই। ওই দিন সন্ধ্যায় আমি আমার রুমে পড়ছি, ও হঠাত করে ঘরে ঢুকে গেল। আমার কাছে এসে বলল, ‘আমি তোমাকে ভাইও বলব না, আপনিও বলব না’। বলেই ঘর থেকে দোর দিয়ে বের হয়ে গেল। আমার হঠাত করেই কোন কিছু মাথায় ঢোকে না। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম, ও কি বোঝাতে চাচ্ছে। ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাই আমাকে ভাই বলতে চাচ্ছে না ।ভালবাসা, এই জিনিসটাকে আমি কোনদিনও পছন্দ করিনি। আমার মতে এটা শুধু time pass ছাড়া কিছুই নাহ। কিন্তু আমিও যে মনে মনে ওকে পছন্দ করি এটা বুঝতে বেশি সময় লাগল না।
৩দিন পরের কথা…….
আমরা বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরছি। আগেই বলেছি বাসায় ফেরার পথে ওদের স্কুল পরে। ওদের স্কুলের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছি, আসিফ বলে, ‘দোস্ত, দেখ তোরে ওই মাইয়াডা ডাকতেছে।’। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি ফারিয়া ডাকছে। বন্ধুরা সব হেসে দিল।‘কিরে, কাহিনী কি। তোর জিএফ নাকি’। আমি চরম বিব্রিতিকর অবস্থায় পরলাম। রাগে আমার গা জ্বলছে। বন্ধুরা ঠেলে দিয়ে বলল, ‘আরে যাস না কেন। কতক্ষন ধরে ডাকছে’। আমি রাগে ফুলতে ফুলতে গেলাম। যাওয়ার সাথেই আমার কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও বলে উঠল, ‘এই, আমাকে আজ একটু সাইকেলে বাসায় নিয়ে যাইতে পারবা?’। আমি কঠোর গলায় বললাম, না। ও আমার গলার স্বর শুনে ভয় পেয়ে গেলো। ও কখনও আমার এরকম রাগান্বিত অবস্থায় দেখে নি। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমি আবার কঠোর গলায় বললাম, ‘এরপর থেকে রাস্তায় আমাকে কখনও ডাক দিবানা। দেখতেছো না আমি আমার বন্ধুদের সাথে যাচ্ছি।’ ও আমার কাছ থেকে এরকম expect করে নি। মনে হল ওর ছলছল করছে। আমি আর কোন কথা না বলে বন্ধদের কাছে চলে আসলাম। কিচুক্ষন পরে বুঝতে পারলাম ভুল করে ফেলেছি। এতটা খারাপ ব্যাবহার করা উচিত হয় নি। ভাবছিলাম ফিরে যাব। কিন্তু ও তো এতক্ষণে রিক্সায় করে বাসায় চলে গেছে। পরীক্ষা দিয়ে আমরা বন্ধুরা সবায় গল্প করতে করতে বাসায় যায়। তাই বাসায় যাইতে একটু দেরি হয়। বাসায় গিয়ে দেখি ও আমার রুমে। আমাকেই দেখেই ও জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার কাছে কে বড়। আমি না তোমার বন্ধুরা।’। আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম, ‘অবশ্যয় আমার বন্ধুরা। ওরায় আমার কাছে সব। আর তুমি আর কে যে প্রত্যেকদিন তোমাকে সাইকেলে করে বাসায় নিয়ে আসতে হবে।’।‘আমি তোমার কেউ না?’।‘নাহ। তুমি আমার কেউ নাহ। তুমি এখন রুম থেকে বের হউ। মন মেজাজ ভাল না। পরীক্ষা খারাপ হয়ছে। যাও বের হউ’।ও আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বের হয়ে গেলো। ঐদিন আসলেই মন ভাল ছিল না। অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। আর অঙ্ক পরীক্ষা মানেই পরীক্ষা খারাপ। পরীক্ষা খারাপ হয়লে কার না মন খারাপ হয় না। তারপর আবার ও যা করল। তারপর ১ সপ্তাহ কেটে গেলো। ওর সাথে দেখা হয়। আমাদের বাসায় আসে না। আমার যেন কেমন লাগছিল। বুঝতে পারলাম, ওকে না দেখলে আমার সময় কাটছে না। ও কে দেখতে খুব মন চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে দেখা করব। হটাত করে আনটি এলেন। বললেন তার মেয়ের কথা। সে নাকি একেবারেই খাওয়া দাওয়া করছে না। রুম থেকে বের হয় না। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বুঝতে পারলাম, সব আমার দোষ। আমি আনটিকে বললাম, ‘আনটি, আমি একটু ওর রুমে যাব’।‘তাই ই তো বলতে এসেছি। তুমি একটু ওর কাছে যাও। দেখ ওর মন ভাল করে দিতে পার কিনা। সেই দিন ও তোমার কাছে আসবে বলে বের হল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকল।তাই ভাবলাম, তোমার সাথে কিছু হয়ছে কিনা’। এখন আমি কি বলবো। আমরা জন্যেই তো এমন হয়েছে।আমি বললাম, ‘আচ্ছা, আমি দেখছি’। বলে নিচে আসলাম। আসার সময় দেখি আনটি আমার আম্মাকে কি যেন বলছে। জানতে ইচ্ছা করল কি বলছে কিন্তু এখন সময় নেই। আমি ওর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দরজা খলা। ভেতরে উকি দিতেই দেখি মাথা নিচু করে টেবিলে বসে আছে। মনে হচ্ছে কান্না করছে। আমি একটু কাশি দিলাম। ও তারাতারি করে চোখ মুছে পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখেই মুখ লুকিয়ে ফেলল। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। কাছে গিয়ে বললাম, ‘তুমি ক কান্না করছ’। ‘কই নাতো। আমি আবার কার জন্য কাদব’।‘ঐযে আমি দেখছি তোমার টেবিল ভেজা। অবশ্যয় কেঁদে ভিজাইছো’।‘আমি কাঁদি আর যাই করি, তাতে তোমার কি। আমি তোমার কিছুই না।’।‘sorry, আমি বুঝতে পারি নাই এমন হবে’।‘কিসের সরি। সরি বলার কোন দরকার নাই। এই ঘরে তোমার কোন কাজ না থাকলে চলে যেতে পার’। ‘অবশ্যই কাজ আছে। অনেক বড় কাজ।’। ‘কি কাজ?’। ‘তোমার মন ভাল করার কাজ।’।‘এহ, আইসে। এতকাল কই ছিলা।’। ‘তোমার পাশেই ছিলাম’।‘আমি তো তোমার কেও না। তাইলে আমার পাশে ছিলা কি করতে?’।‘দেখ, ১ খোটা বার বার দিবা না। মুখ ফসকে বের হয়েগেছিল’।‘তাই নাকি।তাইলে তো মনে হয় তুমি যা বল সবই মুখ ফসকেই বের হয়’।‘বাদ দাউ তো। তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে’।‘কি প্রশ্ন?’।‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’। ও কিছুক্ষণ ইতস্তত করে তারপর মাথা নারল। আমি বললাম,‘তাহলে আগে বলনি কেন?’।‘তুমি কথাও শুনেছ একটা মেয়ে প্রথমে ছেলেকে ভালবাসি বলেছে।’।‘ও, এই জন্যে তুমি বুঝি এমন করছ।’।‘হুম’। ‘তো আমার কথা শুনবা না?’। ‘কি কথা?’।‘আমি তোমাকে ভালবাসি কিনা?’। ও থমকে দাঁড়াল। মনে হচ্ছে ওর মাথায় বাজ পরেছে। চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ওর অবস্থা দেখে ফাজলামি করতে ইচ্ছা করল। আমি একটু কাঠিন্যের শুরে বলে, ‘যদি বলি না, আমি তোমায় ভালবাসি না, তাহলে কি করবে?’। ওর চোখে পানি এসে গেছে। নাহ, একে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। এমনেই এক সপ্তায় অর্ধেক চিকন হয়েগেছে। একে আরও কষ্ট দিলে এ আর বাঁচবে না। আমি ওর হাত ধরে বললাম, ‘এই, তুমি কান্না কছ কেন। আমিকি বলেছি নাকি যে তোমায় ভালবাসি না।আমি তো একটু ফাজলামি করলাম।’। ও আমার পিঠে থাপড়াতে শুরু করল। খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছে। আমি ওকে জরিয়ে ধরে বললাম। তোমার দায়িত্ব আমি সারাজীবনের জন্য নিলাম। ও আমাকে আরও শক্ত করে ধরে কেঁদে দিল। কিছুক্ষণ পর আমার দরজার দিকে চোখ পরতেই দেখি আম্মা আর আনটি দাঁড়িয়ে। তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি তাদের দেখেই ওর থেকে দূরে সরে গেলাম। ফারিয়া বলল, ‘কি হয়ছে?’। ওকে দরজার দিকে ইশারা করলাম। ফারিয়া ওদিকে দেখেই লজ্জাই মাথা নিচু করে ফেললো। আর আম্মা আর আনটি হেসে দিল।
এখন আমরা জুটিয়ে প্রেম করছি। আমাদের ২ পরিবারই মেনে নিয়েছে আমাদের সম্পর্ক। আগে ভাবতাম ভালবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। এখন বুঝতে পেরেছি এর সাথে আমরা অতপ্রত ভাবে জ্বরিয়ে রয়েছি। এটি ছাড়া পৃথিবী অচল। এর জন্যেই পৃথিবীটা আজও এত সন্দর
[এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। অনেক দিন ধরেই ভাবছি একটা গল্প লিখব। কিন্তু পড়ালেখার কারণে হয়ে ওঠে না। কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর সামনে আমার এস.এস.সি পরীক্ষা। তাই সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন। আশা করি গল্পটা ভাল লেগেছে।]

এই ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে 22L

১ ঘণ্টা ধরে রিকশা নিয়ে উদ্দেশ্যহীন
ভাবে ঘুরতেছি। রিকশাচালক কে কিছুটা বিরক্ত
মনে হল।
বিকেলে রোদের তেজ কমে গেলেও
চারদিকে ভ্যাপসা গরম। রিকশাচালক এর শরীর
থেকে ঘাম পড়তেছে।
-রিকশাচালকঃ ভাইজান কই যাইবেন?
-আমিঃ কোথাও না , এমনি ঘুরতেছি।
-রিকশাচালকঃ ও আইচ্চা (বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল)
-আমিঃ ভালোবাসা খুজতে বের
হইছি,পেয়ে গেলে ঘোরা বন্ধ করে দেব।
-রিকশাচালকঃ তাইলে সারাজীবনেও ঘোরা বন্ধ
হইব না। এই দুনিয়ায় ভালবাসা নাই। সবাই
আছে নিজের ধান্দা লইয়া।
-আমিঃ কি নাম আপনার?
রিকশাচালকঃ: মোসলেম উদ্দিন…
রিকশা থামিয়ে ২ টা সেভেন আপ কিনলাম ,
একটা আমার জন্য আরেকটা দিলাম মোসলেম
উদ্দিন কে। মোসলেম উদ্দিন এর চোখ চক চক
করে উঠল। গামছা দিয়ে পেচিয়ে রাখল সেভেন
আপ এর বোতল।
আমিঃ: খাচ্ছেন না কেন?
মোসলেম উদ্দিনঃ: আমি খামু না।
বাড়িতে নিয়া যামু ছোট পোলাটার লাইগা।
গরীব মানুষ এইগুলা কিন্না দিতে পারিনা।
আজকে পাইলে খুশি হইব। ছোট মাইয়াটা আবার
পুতুল এর বায়না ধরছে। গরীবের কি এত
বায়না ধরলে চলে। আইজকা একটা ছোট পুতুল কিনুম। বাপ যখন হইছি বায়না ত মিটাইতেই
হইব।
আমি তাকিয়ে আছি মোসলেম উদ্দিন এর দিকে ।
মোসলেম উদ্দিন ভালবাসার
সংজ্ঞা জানেনা কিন্তু ভালবাসতে জানে।
দারিদ্রতা তার
ভালোবাসা কমাতে পারেনি এতটুকু। সন্তানের
জন্য বাবা-মার ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা।
এই ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে।
বাবা- মা বেঁচে থাকুক সব সন্তানের হৃদয়ে।

মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০১৪

প্রতিদিনের মত মোড়ের এই টং দোকানটার কাছে এসেই আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। বদমাইশ
ছেলেগুলো রোজ একই টাইমে এখানে বসে থাকবে। ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকবে আর মিট-মিট করে হাসবে। দেখে মনে হয় জীবনে কোন মেয়ে মানুষ দেখে নাই। যেন ভিনগ্রহের কোন প্রাণী রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করে প্রত্যেকটার দুই গালে দুটি করে থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করি. তোদের খেয়ে-দেয়ে কাজ নাই? প্রতিদিন এক-ই টাইমে এখানে বসে থাকিস কেন? আমাকে কি এলিয়েন মনে হয়? কিন্তু পারছিনা। প্রতিদিনের মতো আজও দেখেও না দেখার মতো চলে যাচ্ছি।
আজ এমনিতেই মেজাজ গরম। দশ মিনিট দরে দাড়িয়ে থেকেও কোন রিক্সা না পেয়ে হেটে কলেজে যাচ্ছি। রিক্সা ওয়ালারা মনে হচ্ছে আজ কাল প্রাইভেট কার ওয়ালা হয়ে গেছে। এখন তারা রিক্সা চালায় না প্রাইভেট কার চালায়।
---এক্সকিউজ মি আপু।
আমি পিছন ফিরে তাকালাম। টং দোকানের ঐ বদমাইশ গুলোর একটি পিছনে দাড়িয়ে।
---আপু আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
মাথায় এলোমেলো চুল। দেখে মনে হচ্ছে গত দুই সপ্তাহ ধরে মুখের দাড়ি কাটে না।
---কি কথা?
মুখ থেকে একটু আগে খেয়ে আসা সিগারেটের ধোঁয়া বেড়িয়ে আসছে। কপালে ফুটা ফুটা ঘাম। মনে হচ্ছে এই মাত্র দুই মন ওজনের বস্তা নামিয়ে এসেছে মালিকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য।
---আসলে আপু কিভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছিনা।
---বুঝতে পারছেন না তাহলে কথা বলতে আসছেন কেন? মেয়েদের রাস্তায় একা পেলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে? পিছন থেকে ডাকতে ইচ্ছে করে?
রাগে আমার শরীর ঘিনঘিন করছে। এই বখাটে ক্ষ্যাতগুলোর যন্ত্রণায় রাস্তায় বেড় হওয়া যায় না। মেয়ে দেখলেই হারামিগুলো ঝাপিয়ে পরতে চায়। টেনে হেছড়ে খেতে চায়।
---আসলে আপু আপনে যা ভাবছেন আমি ঐ রকম নই। আমার নাম সানি।
---আপনার নাম সানি! এটা বলতে এসেছেন? আর আপু আপু করছেন কেন? আমি আপনার কোন জম্মের আপু? শুনুন আপনার মত ছেলেদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।
---আসলে. . . . না মানে. . . আপু আপনাকে একটা চিরকুট দিতে এসেছি।
---আমাকে চিরকুট দিতে এসেছেন? কিসের চিরকুট?
ছেলেটি আমার সামনে দাড়ানো। মূখ থেকে সিগারেটের দুর্গন্ধ বেড়িয়ে আসছে। এতো বাজে জিনিস মানুষ কিভাবে খায় আমি বুজতে পারি না।সানি আবার আমতা আমতা করে বলছে--
---সরি, কিছু মনে করবেন না। দোকানে যারা বসে আছে তারা আমার ফ্রেন্ড। ওদের সাথে আমি বাজি ধরেছি। যদি আপনাকে আমি এই চিরকুটটি দিতে পারি তাহলে তারা আমাকে কে এফ সি তে খাওয়াবে। প্লিজ আপু অন্য কিছু মনে করবেন না।
ছেলের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! চিরকুটের দিকে তাকাতেই লিখাটি চোখে পরলো। ওখানে লিখা "I LOVE YOU"। রাগে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম--
---বদমায়েশি করার আর জায়গা পাননা? মেয়ে দেখলেই চিরকুট দিতে ইচ্ছে করে? বাজি ধরতে ইচ্ছে করে? মেয়েদের আপনারা কি মনে করেন? বাজারের পণ্য না জুয়ার দান?
সানি কোন কথা বলছে না। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রয়েছে। প্রচন্ড অপমানিত হলে মানুষকে যেমন দেখায় ঠিক তেমন লাগছে।
---আপনাদের বংশ পরিচয় নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। ভালো বংশের ছেলেরা তো রাস্তায় দাড়িয়ে মেয়েদের ট্রিকস্ করে না! লজ্জা থাকলে ফের যেন এখানে না দেখি। আর বাজি ধরতে চাইলে আপনার ফ্যামিলির কাউকে নিয়ে ধরুন। রাস্তায় এসে নিজের বংশ পরিচয় দেখাবেন না।
এই ক্ষ্যাতটার সামনে আমার আর দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কথা বলতেও ঘৃণা করছে।
আমি আর দাড়ালাম না। পাশেই একটা খালি রিক্সা পেয়ে উঠে পরলাম।
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

মাঝে মাঝে আমি আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হই। মনে মনে বলি কিরে প্রতিভা তোকে এতো সুন্দর লাগছে কেন? আজ আমার সেরকম কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে অনেক্ষন ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখি। হাসলে কেমন লাগে দেখি, কাঁদলে কেমন লাগে কিংবা অভিমান করলে কেমন লাগে দেখি। কিন্তু বেশিক্ষন নিজেকে দেখতে পারছি না। সময় নেই। কলেজের ফাউন্ডেশন ডে উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। দুপুর দুটার মধ্যে যাওয়ার কথা। এখন বাজে তিনটা। অনেক দেরি করে ফেলেছি। তবু নিজেকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে রেখে কয়েকবার দেখে নিয়েছি।
আজ শাড়ি পরেছি। নীল শাড়ি। কপালে লাল টিপ। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। যেদিন বেশি সুন্দর লাগে সেদিন বেশি বেশি করে দেখতে ইচ্ছে করে।
--- আপু তুমি এখনো যাওনি? আর কতো সাজো? এমনিতেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে। এতো সাজতে হবে না।
আমাকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দেখলেই পূর্ণতার মেজাজ গরম হয়। ছোট বোনটি কেন আমার সাজা দেখতে পারে না বুঝিনা।
---এইতো যাচ্ছি। তুই যাবি আমার সাথে?
---না।আমার যাওয়া লাগবে না। তুমিই যাও। তোমার সাথে গেলে আমাকে কুৎসিত লাগে।
পূর্ণতা দেখতে অনেক সুন্দর। তবু কেন আমাকে এতো হিংসা করে বুঝি না।
---তুই সবসময় আমাকে এতো হিংসে করিস কেন বলতো? আমি কি তোকে কখনো সাজতে নিষেধ করছি?
---ওমা! আমি তোমাকে কখন হিংসে করলাম? তোমাকে সুন্দর লাগছে বলছি বলে হিংসে করা হয়? ঠিক আছে তুমি সাজো। সাজতে সাজতে পেত্নী হও। আমি গেলাম।
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। মেয়েটাকে একটা কথা বলা যায় না। অমনি রাগ করে। রাগ যেন সবসময় ঠোঁটের কিনারায় এসে থাকে।
বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সা পেয়ে গেছি। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে থাকা অসহ্য লাগে। আজ তেমন লাগছে না। অবশ্য একা একা যেতে ভালো লাগছে না। পূর্ণতা সাথে থাকলে ভালো হতো। দুজনে গল্প করে যেতে পারতাম।
রিক্সা ছুটে চলেছে। বিকেলের স্নিগ্ধ আলো হালকা বাতাসে মিশ্রিত হয়ে গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মোড়ের টং দোকানটার কাছে এসে আগের মতো এখন আর মেজাজ গরম হয়না। বদমাইশ ছেলেগুলোকে গত এক সপ্তাহ দরে কলেজ যাবার সময় দেখিনা। একদিনেই জন্মের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করে না বলে ওরা মাথায় উঠে। দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের নোংরামি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আজ কলেজ অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। মেইন গেইট থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসে লাল নীল তারা বাতি লাগিয়েছে। চারদিকে নতুন নতুন ফুলের টব বসানো। অনেক ছেলেমেয়ে পারফর্ম করবে বলে বাহারি রংয়ের ও ডিজাইনের পোশাক পরে এসেছে। মুখে কড়া মেকাপ। দেখতে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।
মাঠের একপাশে বিশাল মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। যেখানে এইমাত্র একটি ছেলে ও একটি মেয়ে চমৎকার নিত্য উপহার দিয়েছে। দেখতে খুব মজা লাগছে। এখন একটি ছেলে এসেছে গান গাইতে। বাড়ি মিষ্টি গলা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে। সন্ধ্যার পরে বাহিরে থাকলে আম্মু ভিশন টেনশন করে। কখনো সন্ধ্যার পরে একা বাহিরে থাকতে পারি না। রাত করে বাসার ফিরলে অনেক বকা খেতে হয়। আমার সাথে আমার দুই ক্লাসমেট। নীলা ও শিখা। মাঝে মাঝে ওদেরকে দেখে আমার প্রচন্ড হিংসে হয়। ওরা যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারে। যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। রাত দশটার পর বাসায় ফিরলেও কেউ কিছু বলে না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ওদের মতো হই। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াই। কিন্তু পারিনা। আমার মেন্টালিটি আমাকে বাধা দেয়। আমার সোসাইটি আমাকে বাধা দেয়।
বিকেল থেকে বসে আছি। অনুষ্ঠান ছেড়ে একটুও উঠতে ইচ্ছে করছে না। প্রত্যেকের প্রেজেন্টেশনই অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু আর থাকতে পারছি না। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেক্ষন আগে।
---নীলা-শিখা আমি যাইরে। আর থাকতে পারছি না।
---এখনই চলে যাবি? আর একটু থাক।
---নারে আম্মু অনেক টেনশন করবে।
ইচ্ছে থাকা সত্যেও আমি প্রগ্রামে থাকতে পারছি না। নীলা-শিখার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বাহিরে আধো আলো আধো ছায়া। আকাশে মধ্য বয়সি চাঁদ জোছনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ কবে একা একা জোছনা রাতে রিক্সা করে বাসায় ফিরেছি মনে নেই। ভাবতেই ভালো লাগছে।
রাস্তা মনে হচ্ছে জনমানব শুন্য। কোথাও কেউ নেই অবস্থা। ইদানিং কি যে হলো সন্ধ্যার পরে কেউ ঘর থেকে বের হয়না। সবার মাঝে আতংক বিরাজ করে। কি হয় কি হয় অবস্থা। কখন কোথায় আগুন দিচ্ছে বোমা মারছে বলা যায়না। আমাদের এই মানুষ মারার রাজনীতি কবে যে বন্ধ হবে আল্লাহ জানে। হঠাৎ হঠাৎ অবশ্য রাস্তায় দুই-এক জনকে দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয় খুব জরুরী কাজে বের হয়েছে।
মোড়ের টং দোকানটার বেতরে দোকানি ছেলেটা বসে আছে। আশপাশে কেউ নেই। দেখে মনে হচ্ছে নিঃসঙ্গ কোন একটি গ্রহে একটি প্রাণীর বাস।
দূর থেকে আলো ফেলে একটি মটরসাইকেল ছুটে আসছে। হেড লাইটের আপার পজিশন দিয়ে আলো আসছে। সম্পূর্ণ আলো আমার এবং রিক্সা ওয়ালার চোখে পরেছে। পিছনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাছে এসেই হুড়মুড় করে বাইকের পিছন থেকে দুটি লোক নেমে এসে রিক্সার দুই দিক থেকে আমাকে ঘিয়ে ধরেছে। আতংকে, ভয়ে আমি সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছি। রিক্সা ওয়ালা রিক্সা ফেলে ভয়ে পালিয়েছে। একজন আমাকে রিক্সা থেকে হেছকা টান দিয়ে নামিয়ে নাক মুখ একহাতে চেপে ধরেছে যেন মনে হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবো। অন্য হাতে একটি চাকু পেটের কাছে এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেন অর্ধেকটা পেটে ডুকে গেছে। ভয়ে যন্ত্রণায় আমার সারা শরীর থর থর করে কাপছে। একটুও নড়তে পারছি না। আমাকে ধরে রাখা লোকটা কন্ঠকে ভয়ংকর করে বললো--
---চিৎকার করবি তো জানে মেরে ফেলবো।
আমি চিৎকার করতে পারছি না। নড়াচড়া করতে পারছি না। অন্য লোকটা আমার গলার সোনার চেইন, কানের দোল খুলতে লাগলো। ভয়ে আতংকে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হঠাৎ ধুম করে একটা শব্দ হওয়ার সাথে সাথে আমাকে ধরে রাখা লোকটা "আহহ" করে চিৎকার দিয়ে আমাকে ছেড়ে দুহাতে মাথায় হাত চেপে ধরেছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে ছুটে আসা ছেলেটি অন্য জনের নাক বড়াবড় হাতে রাখা ইট দিয়ে মেরেছে। আমি অনুভব করলাম আমার নাকে মুখে হালকা গরম তরল এসে পরেছে। মুহুর্তের মাঝে কি হলো বুঝতে পারছি না। সবকিছু কেমন সিনেম্যাটিক লাগছে।
বাইকে বসে থাকা অপর ছিনতাইকারী মনে হয় প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। তাড়াতাড়ি পালাতে চাইলো। বাইক স্টার্ট দেয়ার সাথে সাথে হেড লাইটে আলো এসে পরেছে আমাদের গায়ে। আগন্তুক ছেলেটিকে চেনা গেলো। সানি। আমাকে চিরকুট দিয়ে থাপ্পড় খাওয়া সানি। আঘাত পাওয়া লোক দুটি বাইকের কাছে ছুটে গেলে।
আমি মুর্তির মতো দাড়িয়ে রয়েছি। কিছুই বলতে পারছি না।
মনে হয় সানি আঘাত পেয়েছে। বাম হাতের কব্জির উপর থেকে রক্ত পরছে। ওর সেই দিকে কোন খেয়াল নেই। বুঝা যাচ্ছে আমাকে দেখে সে হতভম্ব।
---আপনার মনে হয়ে কব্জির উপরে কেটে গেছে।
আমি আস্তে আস্তে সানিকে বললাম। সানি ক্ষত হাতটি অপর হাত দিয়ে টেনে দেখছে। মনে হচ্ছে অনেকখানি কেটে গেছে। আমি কাছে গিয়ে দাড়ালাম। কাটা স্থানের রক্তে পরনের সাদা টি শার্টের অনেকটা ভিজে গেছে। হাত দিয়ে দেখতে চাইলাম কতোটুক কেটেছে।
---এ কিছু না। আপনার কিছু হয়নি তো?
আমি ওর রক্ত ভেজা বাহু স্পর্শ করতে করতে বললাম--
---না আমার কিছু হয়নি। আপনার অনেকটা কেটে গেছে আসুন কিছু দিয়ে বেধে দেই।
---লাগবেনা। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আর আপনার মুখে মনে হয় রক্ত লেগেছে, ওটা মুছে নিন।
আমি কিছু বলতে পারলাম না। সেদিনের থাপ্পড় খেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখা মুখটি চোখের সামনে বেশে উঠলো।

আমি সানির পিছন পিছন হাটছি। লজ্জায় অনুশোচনায় আমি কোন কথা বলতে পারছি না। নিজেকে আমার প্রচন্ড ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে।
* * * * * * * * * * * * * * * * * * *
দুইদিন ধরে বাসা থেকে বের হতে পারছি না। কলেজ বন্ধ ছিলো। সেই ঘটনার পর থেকে আম্মুর কড়া নির্দেশ কলেজ ছাড়া বাসার বাহিরে যাওয়া যাবে না।
আজ কলেজ খুলেছে। আম্মুকে বলে কলেজে যাবার জন্য বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম। আসতে দিতে চায়নি। আরো কয়েক দিন বাসায় রেস্ট নিতে বলেছে। আমি শুনিনি।
রাস্তার একপাশ ধরে হাটছি। আমাকে সানির সাথে দেখা করতেই হবে। সেই দিন লজ্জায় সরি টাও বলতে পারিনি। নিজেকে প্রচন্ড ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে। সানির সাথে বাজে ব্যাবহারের জন্য প্রত্যেকটি মুহুর্ত আমার সত্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমাকে একটি বারের জন্যও শান্তি দিচ্ছে না সানির করুণ অপমানিত মুখ। চোখের সামনে বারবার বেসে আসছে হাতে ধরা চিরকুটের লিখা "I LOVE YOU"। প্রত্যেকটি মুহুর্ত ইচ্ছে করছে চিরকুটটি নিয়ে মায়ার পরশ ভোলাতে। ভালবাসায় বুকের আলিংগনে জড়াতে।
মোড়ের টং দোকানটার কাছে এসে চার দিকে চোখ ভুলিয়ে দেখছি। কোথাও সানির দেখা নেই। থাকার কথাও নয়। তাকে আর টং দোকানটির দ্বারে কাছে দেখিনা। আমি তীর্থের কাকের মতো এদিক সেদিন খুজছি। যদি পাওয়া যায় সেই আশায়।
---আফা আমি আপনারে খুছতেছি।
টং দোকানের ছেলেটি শব্দ করে বললো। আমি ছেলেটির কাছে গেলাম আগ্রহ নিয়ে কিছু একটা শোনার জন্য।
---আফা সানি ভাই আপনেরে এই খামটি দিছে।
আমি খামটি হাতে নিলাম। নিজেকে কেমন জানি শুণ্য মনে হচ্ছে। খামের ভেতরের একটি নীল রংয়ের চিঠিটি।
প্রতিভা,
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে আর কখনো কাউকে কিছু লিখাবো না। তবু সেই আপনাকে লিখতে হচ্ছে। সেই জন্যে সরি।
আমি আমার বাবা মার একমাত্র সন্তান। ভালো ছাত্র ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো জীবনে অন্যরকম কিছু একটা করবো। সবার চেয়ে আলাদা। সেই ইচ্ছে কে মুঠোয় আনার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলো না। কিন্তু আমি পারিনি। আমার ফ্যামিলি আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেইনি। আশ্চর্য হচ্ছেন? আশ্চর্য হবার-ই কথা।
আমি হবার পর আব্বু আম্মুর দশ বছর চলে গেছে তাদের আর কোন সন্তান হয়নি। আব্বুর অনেক আশা ছিল তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে থাকবে। যে কি না সারা বাড়ি আলো করে রাখবে। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। এই নিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আব্বু আম্মুকে পেইন দিতো তার প্রব্লেম বলে। আর আম্মু আব্বুকে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া হতো দুজনের মাঝে। এমনকি আব্বু আম্মুর গায়েও হাত তুলেতো।
দুজনের ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। এটা আমি মানতে পারতাম না। আমার অনেক খারাপ লাগতো। যার কারণে বাসার চেয়ে বাহিরেই বেশি ভালো লাগতো। বাহিরে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগতো। হইহল্লো করে সময় কাটাতে ভালো লাগতো। বন্ধুদের পাল্লাই পরে সিগেরেট খেয়ে সবকিছু ভুলে থাকতাম। এসব করতে করতে কখন যে সেই স্বপ্নবোনা ছেলেটি সমাজের বখাটে, অমানুষ, বদমাইশ হয়ে গেছে নিজেই জানি না।
আপনাকে সেদিন চিরকুটটি দেয়ার পর নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছিলো। নিজেকে রাস্তার কুকুর মনে হচ্ছিলো। আপনাকে অনেক দিন ধরে দোকানে বসে দেখতাম। অনেক ভালো লাগতো। অনেক স্বপ্ন দেখতাম আপনাকে নিয়ে। নিজের দিকে তাকিয়ে আমার স্বপ্নকে প্রত্যেকবার খেলা ঘরে মতো ভেঙ্গে দিয়েছি। সত্যি কথা কি জানেন সেদিন শুধু বাজিতে জেতার জন্য চিরকুটটি আপনাকে দিতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম অন্তত বাজির মাধ্যমে হলেও আমার মনের লিখাটি আপনাকে দেখায়। হয়তো মিছেমিছি ছিলো। তবুওতো বলতে পেরেছি।
গতকাল আব্বু আম্মুর সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয় এবং তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমি আম্মুকে নিয়ে চলে যাচ্ছি দূরে কোথাও। যেখানে আব্বুর মতো মানুষ থাকবে না। চেষ্টা করবো আম্মুকে অনেক অনেক সুখি রাখতে। জানি আব্বু ছাড়া এটা কখনো সম্ভব না। যতই ঝগড়া করুন না কেন আম্মুতো আব্বুকে প্রচন্ড ভালোবাসতো।
আর কখনো আপনার সাথে আমার দেখা হবে না। একদিকে ভালোই হয়েছে। অন্তত একজন বখাটে, বদমাইশ আপনার এলাকায় কমেছে। আমার কি মনে হয় জানেন সমাজের প্রত্যেকটি বখাটে বা খারাপ ছেলেদের পেছনে এমন কিছু একটা আছে। হয়তো আমার মতো নয় অন্যরকম।