বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

একটি অন্যরকম ভালবাসার গল্প 22L


(গল্পের সব চরিত্র, স্থান, কাল এমনকি পুরো গল্পটিই কাল্পনিক। কোন ব্যক্তির সাথে এর কোন মিল থাকলে লেখক দায়ী নয়।)
গতকাল আমাদের নতুন বাসার কাজ শেষ হল। বাসায় মাল-পত্র ওঠানো হচ্ছে। আগে থাকতাম টিনশেডের ১তলা বাসায়। সেটি ভেঙ্গে ২তলা দালান করা হয়েছে। উপর তলায় আমরা থাকব আর নিচ তলা ভাড়া দেওয়া হবে।
১ সপ্তাহ পর…………….
স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার সময় দেখি বাসার সামনে রাস্তায় ১টি অচেনা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। এই মেয়েকে আগে এই মহল্লায় দেখি নাই। হইতবা নতুন এসেছে। দেখতে মোটামুটি সুন্দর। আমি ছোটকাল থেকেই বেপরোয়া টাইপের ছেলে। অত্যন্ত জেদি। কোনদিনও কোন মেয়ের দিকে সেরকম ভাবে তাকায় নি। আসলে আমি মেয়েদের দেখে কোনদিনও কোন প্রকার আকর্ষণ অনুভব করি নি। বাসায় যতক্ষণ থাকি কম্পিঊটার আর টিভি। বাইরে গেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। এই মেয়েকে দেখেও সেরকম কোন অনুভুতি পেলাম না। শুধু ১টু কৌতূহল জাগল। এই এলাকার সব মেয়েকে চিনি, কিন্তু এ কে। অবশ্য পরদিন সব ই জেনে গেলাম। ঐদিন বাসায় গিয়ে দেখি নিচ তলায় মালামাল উঠানো হচ্ছে। বুঝে গেলাম বাসা ভাড়া হয়ে গেছে। তারপরও উপরে গিয়ে আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আম্মা, বাসা ভাড়া হইয়া গেছে’। ‘হ, অই তুই ইকটু নিচে জাইয়া দেইখা আসতি সব ঠিকঠাক উঠাইতেসে কিনা’। ‘নাহ, এখন জামু না। পরে জামু নে’। ‘হ, জাইয়া দেইখা আসিস’। কিন্তু যাওয়া আর হলনা। স্কুল থেকে আসি বিকাল সাড়ে পাঁচটাই। শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। তাই আর বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না। স্কুল শুরু হয় ১২.৩০ এ। নবম শ্রেণীতে উঠেছি এইবার।
পরদিন ভোরবেলা চেচামেচিতে ঘুম ভাঙল। ঘড়িতে দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে। এত ভরে আমি কখনই উঠি না। বুঝতে পারলাম চেঁচামেচি নীচতলায় হচ্ছে। আমার খাটটা জানালার পাশে। তাই বাইরের যেকোনো শব্দ একেবারে গাড়ির হর্নের মত ঘরে ঢোকে। চেঁচামেচিটা হচ্ছে একটি মেয়েলি গলার। আমি মনে মনে ভাবছি এরকম ডাইনীর মত গলা কার যে আমার এত আরামের ঘুম টা ভেঙে দিল। ৮টার আগে আমার কোন দিনও ঘুম ভাঙ্গে। মাঝে মাঝে আব্বুর ডাকে ৭টায় উঠতে হয়। কিন্তু এত আগে কখই না। সকালবেলা
আধঘণ্টা ঘমানো অনেক আরামের। আসলে গলাটা অতটা খারাপ না যতটা আমি বলছি। কিন্তু আমার রাগ উঠে গেলে কোকিলকে কাক ডাকতে আমার কোন সমস্যা হয় না। ব্রাশ করতে করতে ঘর থেকে বের হতেই আম্মা আমাকে দেখে থ মেরে গেল। যেন ভূত দেখেছে। আমি বললাম, ‘কি আম্মা, ভূত দেখলা নাকি’। ‘নারে, ভাবতাসি সূরয কি পশ্চিম দিক দিয়া উঠল নাকি’। ‘আরে নাহ, সূরয ঠিক জাইগা দিয়াই উঠছে। খালি আমিই ভুল সময় উইঠা গেছি আরকি’। ‘অ, তাইই ত দেখতাসি, তা আজ এত সকালে কি মনে কইরা উঠলি’। ‘আগে কউ নিচতলাই কি ডাইনি ভাড়া দিসো’। ‘হায় হায়, সাওয়াল কই কি। ডাইনী ভাড়া দিমু কেন, মানুষই ভাড়া দিসি। ক্যারে, তোর কোন সমেস্যা হইসে ’। ‘খালি নাকি, দ্যেহনা আমার এই সাধের ঘুম খান ভাইঙ্গা দিল’।
‘ও, এই সমস্যা। আসলে ওর স্কুল এই সময়ত তাই একটু চেঁচামেচি করতাসে’। ‘কার স্কুল?’।‘আরে নিচতোলার ওই মাইয়াডা, ফারিয়া’। ‘বাহ বাহ, নামডাও দেহি জাইনা গেস। তা কোন ক্লাসে পরে? কোন স্কুলে?’। ‘এইট এ পরে। গভমেন্ট গার্লস স্কুলে’।‘ও, তা এরকম ডাইনীর মত গলা বানাইসে কিভাবে? আজ আমারে ঊঠাইসে, কাইল এলাকারে উঠাই দিবে।’। ‘চোপ থাক, ১বাপের ১ মাইয়া। যা চাই তাই পাই। তোর নামে জানি কোন কমপ্লেইন না শুনি। ওই মাইয়ার থেইকা দূরে দূরে থাকবি’। ‘এহ, খাইয়াতো কাম নাই। তুমি ওই মাইয়ারে আমার থেইকা দূরে দূরে থাকপার কইও।’। ‘কি, বাঁদরামি শুরু করসিশ না। তোর বাপরে ডাক দিব কইলাম’।‘আসসা আসসা, যাও, আমি অই মাইয়ার ত্রিসীমানাই যাবান না। কিন্ত তুমি ওই মাইয়ারে আমার থেইকা দূরে দূরে থাকতে কইও। এহন মুখ ধুইতে যাইতে দাউ, সরো’। আমি মুখ ধুতে বাথ রুমে চলে গেলাম। আমি আবার আব্বারে জম্মের ভয় পাই। আব্বার চোখ দেখলেই ভয় করে। আব্বার কথা না উঠাইলে আম্মার সাথে আরও কিছুক্ষণ তর্ক করতাম। সকালে প্রায় ৯টার দিকে কলিংবেলের শব্দ হল। আম্মা রান্না ঘর থেকে বললেন, ‘আবির, দরজাটা খুলত। দেখ কে আইসে’। আমি দরজা খুলে দেখলাম আম্মার বয়সী ১জন মহিলা। বুজতে পারলাম ইনি নিচতলার নতুন ভাড়াটিয়া। ওনাকে দেখেই সালাম দিলাম, ‘আসসালা-মু-আলাইকুম আনটি, ভেতরে আসেন’।‘অয়ালাইকুমুসসালাম। তোমার নাম কি বাবা?’।‘জী, আমার নাম আবির। আপনি ভেতরে আসুন’।‘তোমার আম্মু কই, ১টু ডাকতে পারবা তাকে?’।‘অবশ্যই। আপনি ভেতরে আসুন। বশুন’।ওনাকে বসিয়ে আমি আম্মাকে ডাকতে গেলাম। আম্মা এসেই ওনার সাথে গল্প শুরু করে দিল। যে নাকি এত ব্যস্ত যে দরজা খুলতে বাইরে আসতে পারে না, আর একে দেখেই গল্প শুরু করে দিল। আম্মাকে দেখেই আনটি আমার গুণগান করতে লাগল। বুজতে পারলাম এই মহিলা তেল দেওয়াই এক্সপার্ট। কিন্তু আমাকে এত সহজে গলাতে পারবে না। আমি আমার রুমে চলে গেলাম। প্রায় ১২টাই আবার কলিংবেল। আম্মা আবার চিল্লায়ে দরজা খুলতে বললেন। ভাবছিলাম যাব না। কিন্তু ঘরে মেহমান অর্থাৎ আনটি এখনও যান নি। এখন এরকম ব্যাবহার করলে কেমন দেখায়। তাছাড়া স্কুলে যাব না বলে আমার উপর আম্মা প্রচণ্ড রাগান্বিত। এখন আরও রাগাইলে আমার দুপুরের খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অগত্যা আমারেই দরজা খুলতে হইল। দরজা খুলতেই দেখি গতকালের সেই মেয়ে। আমাকে দেখে মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে। বুঝতে পারলাম এই তাহলে সেই মেয়ে যে আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করেছে। তবে স্কুল ড্রেসে তাকে কালকের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। আমি সাধারন ভাবেই বললাম, ‘কি চাই?’।‘আমার আম্মু মনে হয় আপনাদের বাসায় এসেছে। একটু ডেকে দিবেন?’। ‘আমি তো তোমার আম্মুরে চিনি না। আর তুমিই বা কে?’। ‘জী, আমরা গতাকাল নীচতলায় উঠেছি।’।‘ও, খারাও। ডাক দিতিসি তোমার আম্মারে। তুমি ভেতরে আইসা বস।’। ও ভেতরে এসে বসল। আমি আনটিকে ডাক দিলাম।আম্মা আর আনটি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন।তারপর কিছুক্ষণ সোফায় বসে গল্প করলেন। আমি আমার রুমে চলে গেলাম । আমার কম্পিউটার টেবিল থেকে গেস্ট রুম ভালভাবে দেখা যায়। দেখলাম মেয়েটি কিছুক্ষণ পরপরই আমার রুমের দিকে তাকাচ্ছে। চোখে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। কিছুক্ষণপর আনটি তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন। তারা যাওয়ার পর আমি আম্মাকে বললাম, ‘তাইলে এইডাই সেই ডাইনী’। ‘ভালভাবে কথা ক। উনারা শুনতে পারলে কি মনে করবে’। ‘যে আমার এত সাধের ঘুম ভাংসে সে ডাইনী ছারা আর কি’। ‘দারা, তোর আব্বা আইসা নিক। তখন মজা টের পাবি’।‘আম্মা, তুমি কথায় কথায় খালি আব্বার ভয় দেখাও কেন কউ তো।’। ‘কারন তুই খালি তোর আব্বারেই ভয় পাশ’। আমি আর কোন কথা বললাম না। বুঝতে পারসি এরপর আরও তর্ক করতে গেলে বাশ খেতে হবে।
পরের দিন আবারও সেই চেঁচামেচি। নাহ, আর সহ্য করা যায় না। লাফাইতে লাফাইতে ঘর থেকে বের হলাম। আম্মাকে ডেকে কিছুক্ষণ অনেক চিল্লাচিল্লি করলাম। তারপর বললাম এরপর থেকে এরকম করলে আর সহ্য করব না। আমি নিজেই নিচে যাইয়া কথা শোনাই দিয়ে আসব। আম্মা বলে, ‘ভালোয় তো।সকালে উঠাই তো ভাল।’। ‘তোমার কাছে ভাল কিন্ত আমার কাছে না। তুমি আজ ওই মাইয়ারে মানা কইরে দিবা। নাইলে কিন্তু খবর আছে’। আম্মা আমার রাগ জানে। তাই আর কথা বললেন না। ঐদিন আর দেখা হইল না ওই মেয়ের সাথে। পরদিন সকালে কোন চেঁচামেচি শুনলাম না। মানে আম্মা বলে দিয়ে আসছে। ঐদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখি ওই মেয়ে আমার ঘরে।আমার চেস্ট পুলার টা টানাটানি করছে। আমাকে দেখতে পারে নাই। আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম, ‘ওইটা মেয়েদের কোন কাজে লাগে না। ছেলেদের ব্যাম করার জিনিস’। ও আমার কথা শুনে লাফিয়ে উঠল। দোর দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। লজ্জায় না ভয়তে বুঝতে পারলাম না। আমি কোন কিছু না ভেবে গোছলে ঢুকে গেলাম। গোছল শেষে বাথরুম থেকে বের হয়েছি গামছা পরে। খালি গা। আম্মাকে ডাকতে নিজের রুম থেকে বের হতেই দেখি ও গেস্টরুমে সোফায় বসে আছে। ওকে দেখে প্রচণ্ড লজ্জা পেলাম। অচেনা মেয়ে আমাকে গামছা পরা, খালি গা অবস্থায় দেখে ফেলেছে। দেখলাম ও মিটিমিটি হাসছে।আম্মাকে ডেকে যত তারাতারি সম্ভব নিজ রুমে ঢুকে গেলাম। আম্মা ঘরে ঢুকতেই চেচিয়ে উঠলাম, ‘আচ্ছা তুমি কি কও তো, রুমে ও বইসা আছে আমারে কইতে পার না। আমি খালি গায় বাইর হইয়া দেখি ও বইসা আছে’। ‘বারে, তুই কি মাইয়া মানুষ নাকি। খালি গায় দেখছে তাতে কি হইছে’।‘আরে, আমার এই চাঙ্গা বডি দেইখা ফেললো।’।‘এহ, খাওয়া দাওয়া করস না, আবার কয় চাঙ্গা বডি।’।‘যাই হক, ও আমার রুমে ঢুকছিল কি করতে’।‘কি করতে আবার, রুম দেখতে’। ‘এত থুইয়া আমার রুমটাই পছন্দ হইল’। ‘হবার পারে’। ‘আচ্ছা যাই হক, আমারে খাবার দাও। খুব খিদা লাগছে। আর ও কি চইলা গেছে।’।আম্মা বলল, ‘হ, তারতারি খাইতে আয়। পেটটাতো একেবারে পিঠের সাথে মিশা গেছে’। ‘হুম যাই, তুমি তারাতারি ভাত মাখাও।’।
এভাবেই চলতে লাগল দিন কাল। মাঝে মাঝেই চোখাচোখি হয়। হালকা কথা হয় । তবে ১টা সময় নিয়মিত কথা হয়,ও যখন ওর মাকে ডাকতে আসে আর আমি দরজা খুলি। এইটা একটা রুটিনের মত হয়ে গেছে। প্রায় প্রত্যেক দিন এই কাজ করতে হয়। এভাবেই সময় কাটতে লাগল। দেখতে দেখতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলে আসল। ভাগ্য ক্রমে আমাদের দুজনের পরীক্ষাই দুপুরে, ২টাই। এমনই একদিন পরীক্ষা দিতে বের হয়েছি সাইকেল নিয়ে। বাসার সামনে রাস্তায় দেখি আনটি ওকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাদের এলাকার ১টা দোষ আছে। তা হল দুপুরে এই এলাকায় ১টাও রিকসা পাওয়া যাও। ভাগ্য ক্রমে যদি পাওয়া যাও তাও যেতে চাই না। আজ মনে হয় আনটি কোন রিক্সা পাচ্ছেন না। আমাকে দেখে আনটি বললেন, ‘আবির বাবা, তুমি একটু ফারিয়াকে স্কুলে নামায় দিয়া আসবা। দেখ না, ১টাও রিক্সা পাইতাসি না’।‘উম, ঠিকাসে। সমস্যা নাই।’।‘এই ফারিয়া, যাহ ওর সাইকেলে উঠ’। ও সাইকেলে উঠে পরল। ও মনে হয় খুসি হয়েছে। আমার স্কুলে যাওয়ার পথে ওর স্কুল পরে। প্রথমে আমাদের রাস্তা থেকে বড় রাস্তায় যেতে হয়। সেখান থেকে সোজা গেলে স্কুল। বড় রাস্তায় অনেক রিক্সা। ও বড় রাস্তায় উঠে বলল, ‘থাক, আমাকে আর নিতে হবে না। আমি এখন রিক্সায় যেতে পারব।’।আমি বললাম, ‘নাহ, আনটি তোমাকে স্কুল পর্যন্ত নিয়ে যেতে বলেছেন।আমাকে তোমার দায়িত্ব দিছেন। আমাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে’।‘তাই? যদি সারা জীবন এই দায়িত্ব পালন করতে বলে তাহলে করবেন?’। ‘করবোনা কেন। অবশ্যয় করব’। ও চুপ করে গেল। একি, আমি কি বলে ফেললাম। এ মেয়েতো আমাকে কথার জ্বালে আটকিয়ে ফেললো। এখন কি করার। যা ১বার মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে তা কি আর ফেরত আনা জায়।মনে মনে ভাবছি, এইটে পড়া মেয়ের মাথায় বুদ্ধি কত। আর আমি বোকার মত কি বলে ফেললাম। কিছুক্ষণ পর আমিই নীরবতা ভাংলাম।‘এই শোন। আমাকে আপনি বলবা না ঠিকাছে। কেমন জানি বুড়া বুড়া লাগে’।‘কিন্তু আপনি তো আমার চেয়ে বড়।’। ‘বড় হলেই কি আপনি বলতে হবে নাকি। তবে ভাইয়া বল কেমন।’। ও কোন কথা বলল না। ও মনে হয় আমাকে ভাইয়া বলতে নারাজ। আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই ওর স্কলের কাছে চলে আসলাম। ও নেমে ভেতরে চলে গেল। আমার দিকে তাকালও না। বুঝলাম না কি হল। থাক, আমি আমার কাজে যায়, মানে পরীক্ষা দিতে যাই। ওই দিন সন্ধ্যায় আমি আমার রুমে পড়ছি, ও হঠাত করে ঘরে ঢুকে গেল। আমার কাছে এসে বলল, ‘আমি তোমাকে ভাইও বলব না, আপনিও বলব না’। বলেই ঘর থেকে দোর দিয়ে বের হয়ে গেল। আমার হঠাত করেই কোন কিছু মাথায় ঢোকে না। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম, ও কি বোঝাতে চাচ্ছে। ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাই আমাকে ভাই বলতে চাচ্ছে না ।ভালবাসা, এই জিনিসটাকে আমি কোনদিনও পছন্দ করিনি। আমার মতে এটা শুধু time pass ছাড়া কিছুই নাহ। কিন্তু আমিও যে মনে মনে ওকে পছন্দ করি এটা বুঝতে বেশি সময় লাগল না।
৩দিন পরের কথা…….
আমরা বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরছি। আগেই বলেছি বাসায় ফেরার পথে ওদের স্কুল পরে। ওদের স্কুলের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছি, আসিফ বলে, ‘দোস্ত, দেখ তোরে ওই মাইয়াডা ডাকতেছে।’। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি ফারিয়া ডাকছে। বন্ধুরা সব হেসে দিল।‘কিরে, কাহিনী কি। তোর জিএফ নাকি’। আমি চরম বিব্রিতিকর অবস্থায় পরলাম। রাগে আমার গা জ্বলছে। বন্ধুরা ঠেলে দিয়ে বলল, ‘আরে যাস না কেন। কতক্ষন ধরে ডাকছে’। আমি রাগে ফুলতে ফুলতে গেলাম। যাওয়ার সাথেই আমার কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও বলে উঠল, ‘এই, আমাকে আজ একটু সাইকেলে বাসায় নিয়ে যাইতে পারবা?’। আমি কঠোর গলায় বললাম, না। ও আমার গলার স্বর শুনে ভয় পেয়ে গেলো। ও কখনও আমার এরকম রাগান্বিত অবস্থায় দেখে নি। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমি আবার কঠোর গলায় বললাম, ‘এরপর থেকে রাস্তায় আমাকে কখনও ডাক দিবানা। দেখতেছো না আমি আমার বন্ধুদের সাথে যাচ্ছি।’ ও আমার কাছ থেকে এরকম expect করে নি। মনে হল ওর ছলছল করছে। আমি আর কোন কথা না বলে বন্ধদের কাছে চলে আসলাম। কিচুক্ষন পরে বুঝতে পারলাম ভুল করে ফেলেছি। এতটা খারাপ ব্যাবহার করা উচিত হয় নি। ভাবছিলাম ফিরে যাব। কিন্তু ও তো এতক্ষণে রিক্সায় করে বাসায় চলে গেছে। পরীক্ষা দিয়ে আমরা বন্ধুরা সবায় গল্প করতে করতে বাসায় যায়। তাই বাসায় যাইতে একটু দেরি হয়। বাসায় গিয়ে দেখি ও আমার রুমে। আমাকেই দেখেই ও জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার কাছে কে বড়। আমি না তোমার বন্ধুরা।’। আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম, ‘অবশ্যয় আমার বন্ধুরা। ওরায় আমার কাছে সব। আর তুমি আর কে যে প্রত্যেকদিন তোমাকে সাইকেলে করে বাসায় নিয়ে আসতে হবে।’।‘আমি তোমার কেউ না?’।‘নাহ। তুমি আমার কেউ নাহ। তুমি এখন রুম থেকে বের হউ। মন মেজাজ ভাল না। পরীক্ষা খারাপ হয়ছে। যাও বের হউ’।ও আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বের হয়ে গেলো। ঐদিন আসলেই মন ভাল ছিল না। অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। আর অঙ্ক পরীক্ষা মানেই পরীক্ষা খারাপ। পরীক্ষা খারাপ হয়লে কার না মন খারাপ হয় না। তারপর আবার ও যা করল। তারপর ১ সপ্তাহ কেটে গেলো। ওর সাথে দেখা হয়। আমাদের বাসায় আসে না। আমার যেন কেমন লাগছিল। বুঝতে পারলাম, ওকে না দেখলে আমার সময় কাটছে না। ও কে দেখতে খুব মন চাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে দেখা করব। হটাত করে আনটি এলেন। বললেন তার মেয়ের কথা। সে নাকি একেবারেই খাওয়া দাওয়া করছে না। রুম থেকে বের হয় না। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বুঝতে পারলাম, সব আমার দোষ। আমি আনটিকে বললাম, ‘আনটি, আমি একটু ওর রুমে যাব’।‘তাই ই তো বলতে এসেছি। তুমি একটু ওর কাছে যাও। দেখ ওর মন ভাল করে দিতে পার কিনা। সেই দিন ও তোমার কাছে আসবে বলে বের হল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকল।তাই ভাবলাম, তোমার সাথে কিছু হয়ছে কিনা’। এখন আমি কি বলবো। আমরা জন্যেই তো এমন হয়েছে।আমি বললাম, ‘আচ্ছা, আমি দেখছি’। বলে নিচে আসলাম। আসার সময় দেখি আনটি আমার আম্মাকে কি যেন বলছে। জানতে ইচ্ছা করল কি বলছে কিন্তু এখন সময় নেই। আমি ওর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দরজা খলা। ভেতরে উকি দিতেই দেখি মাথা নিচু করে টেবিলে বসে আছে। মনে হচ্ছে কান্না করছে। আমি একটু কাশি দিলাম। ও তারাতারি করে চোখ মুছে পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখেই মুখ লুকিয়ে ফেলল। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। কাছে গিয়ে বললাম, ‘তুমি ক কান্না করছ’। ‘কই নাতো। আমি আবার কার জন্য কাদব’।‘ঐযে আমি দেখছি তোমার টেবিল ভেজা। অবশ্যয় কেঁদে ভিজাইছো’।‘আমি কাঁদি আর যাই করি, তাতে তোমার কি। আমি তোমার কিছুই না।’।‘sorry, আমি বুঝতে পারি নাই এমন হবে’।‘কিসের সরি। সরি বলার কোন দরকার নাই। এই ঘরে তোমার কোন কাজ না থাকলে চলে যেতে পার’। ‘অবশ্যই কাজ আছে। অনেক বড় কাজ।’। ‘কি কাজ?’। ‘তোমার মন ভাল করার কাজ।’।‘এহ, আইসে। এতকাল কই ছিলা।’। ‘তোমার পাশেই ছিলাম’।‘আমি তো তোমার কেও না। তাইলে আমার পাশে ছিলা কি করতে?’।‘দেখ, ১ খোটা বার বার দিবা না। মুখ ফসকে বের হয়েগেছিল’।‘তাই নাকি।তাইলে তো মনে হয় তুমি যা বল সবই মুখ ফসকেই বের হয়’।‘বাদ দাউ তো। তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে’।‘কি প্রশ্ন?’।‘তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’। ও কিছুক্ষণ ইতস্তত করে তারপর মাথা নারল। আমি বললাম,‘তাহলে আগে বলনি কেন?’।‘তুমি কথাও শুনেছ একটা মেয়ে প্রথমে ছেলেকে ভালবাসি বলেছে।’।‘ও, এই জন্যে তুমি বুঝি এমন করছ।’।‘হুম’। ‘তো আমার কথা শুনবা না?’। ‘কি কথা?’।‘আমি তোমাকে ভালবাসি কিনা?’। ও থমকে দাঁড়াল। মনে হচ্ছে ওর মাথায় বাজ পরেছে। চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ওর অবস্থা দেখে ফাজলামি করতে ইচ্ছা করল। আমি একটু কাঠিন্যের শুরে বলে, ‘যদি বলি না, আমি তোমায় ভালবাসি না, তাহলে কি করবে?’। ওর চোখে পানি এসে গেছে। নাহ, একে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হবে না। এমনেই এক সপ্তায় অর্ধেক চিকন হয়েগেছে। একে আরও কষ্ট দিলে এ আর বাঁচবে না। আমি ওর হাত ধরে বললাম, ‘এই, তুমি কান্না কছ কেন। আমিকি বলেছি নাকি যে তোমায় ভালবাসি না।আমি তো একটু ফাজলামি করলাম।’। ও আমার পিঠে থাপড়াতে শুরু করল। খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছে। আমি ওকে জরিয়ে ধরে বললাম। তোমার দায়িত্ব আমি সারাজীবনের জন্য নিলাম। ও আমাকে আরও শক্ত করে ধরে কেঁদে দিল। কিছুক্ষণ পর আমার দরজার দিকে চোখ পরতেই দেখি আম্মা আর আনটি দাঁড়িয়ে। তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি তাদের দেখেই ওর থেকে দূরে সরে গেলাম। ফারিয়া বলল, ‘কি হয়ছে?’। ওকে দরজার দিকে ইশারা করলাম। ফারিয়া ওদিকে দেখেই লজ্জাই মাথা নিচু করে ফেললো। আর আম্মা আর আনটি হেসে দিল।
এখন আমরা জুটিয়ে প্রেম করছি। আমাদের ২ পরিবারই মেনে নিয়েছে আমাদের সম্পর্ক। আগে ভাবতাম ভালবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। এখন বুঝতে পেরেছি এর সাথে আমরা অতপ্রত ভাবে জ্বরিয়ে রয়েছি। এটি ছাড়া পৃথিবী অচল। এর জন্যেই পৃথিবীটা আজও এত সন্দর
[এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। অনেক দিন ধরেই ভাবছি একটা গল্প লিখব। কিন্তু পড়ালেখার কারণে হয়ে ওঠে না। কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর সামনে আমার এস.এস.সি পরীক্ষা। তাই সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন। আশা করি গল্পটা ভাল লেগেছে।]

1 টি মন্তব্য:

  1. Playtech Playtech Online Casino (12/2021)
    In this review of Playtech, 메리트 카지노 주소 we have tried and kadangpintar trusted online casino software and everything it brings 샌즈카지노 to the table. It's a good one with

    উত্তরমুছুন