বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

ভালবাসার গল্প  হিমু ক্যাফের

হিমু ক্যাফের দোতলায় বসে আছি। যদিও
এখানে মাঝে মাঝেই আসি। তবে আজকের
আসা টা একদম আলাদা। কারণ আজ
তানিয়া আমার সাথে দেখা করার জন্য এই
জায়গা টায় আসতে বলেছে।
তানিয়াকে অনেক ঘুরিয়েছি। কিন্তু আজ আর
সেটা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই
এখানে আসতে হলো।গম্ভীর আর চিন্তিত
একটা ভাব নিয়ে হিমু ক্যাফের
পুরোটা নিঁখুত ভাবে দেখে নিলাম। হিমু
ক্যাফ টাকে আজ বড়ো অচেনা মনে হচ্ছে।
বিশেষ মুহুর্তে বিশেষ
জায়গা গুলোকে হয়তো এমনি লাগে।
আমি জানি তানিয়া আমাকে দেখে চমকে উঠবে।
কারণ এর আগে ও আমাকে আরো একবার
দেখেছে। যদিও সেটা একজন অপরিচিত
মানুষ হিসাবেই।
ও কি বিশ্বাস করবে আমার সাথেই গত এক
বছর ধরে অনলাইনে অনবরত চ্যাট
করে গেছে। সুখ দুঃখের অনুভূতি ভাগ
করেছে। আর ফোন নাম্বার আদান প্রদানের
পর ফোনে কথা বলে রাতের পর রাত
জেগে জেগে কাটিয়েছে। মোবাইল
টা হাতে নিয়ে তানিয়াকে ফোন দিলাম,
-আমি হলুদ শার্ট পড়ে হিমু
ক্যাফে বসে আছি। তোমার
আসতে কতো ক্ষণ?
-এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি। আর দুই
মিনিট।
-হুম। আমি দোতলায় তোমার জন্য
অপেক্ষা করছি।
তানিয়া আমাকে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাস
করলো,
- আমার না খুব লজ্জা লাগছে।
আমি কি করে তোমার মুখোমুখি দাড়াবো ?
তোমার পাশাপাশি বসে কথা বলবো ?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-তাহলে আমি চলে যাই। লজ্জা নামক
কোনো কিছুরই মুখোমুখি তোমাকে দাড়
করাতে চাই না। তানিয়া এবার উত্তেজিত
গলায় চেচিয়ে বললো,
-না, তুমি যাবে না। চুপ করে বসে থাকো।
আমি আসছি।
তানিয়ার কথা মতো আমি চুপ
করে বসে আছি। তবে এর আগে নিজের
ফোনটা বন্ধ করে নিলাম।
যাতে তানিয়া ভিতরে এসেই
বুঝতে না পারে আমিই সেই ছেলে।
আমি জানি তানিয়া আমার ফোন বন্ধ
পেলে হয়তো অনেক কষ্ট পাবে। খুব বিব্রত
কর অবস্হায় পড়বে।আর রাগে আমার চৌদ্দ
গোষ্টি উদ্ধার করবে। তানিয়া দু তালায়
এসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
ফোনটা একবার হাতে নিচ্ছে আরেক বার
কানে নিচ্ছে। আমি দূর থেকে ওর মুখের
দিকে তাকালাম। ওর চোখ গুলো ঝলঝল
করছে। বৃষ্টি আসার আগে সমস্ত
মুখে যেনো অজস্র মেঘের আনাগোনা।
বড্ডো মায়া হচ্ছে ওর জন্য। ওর চোখ
গুলো হয়তো হলুদ রঙের শার্ট
পড়া কোনো ছেলের মুখ খুজে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু এখানে হলুদ শার্ট গায়ে কেউ নেই।
আমি চেয়ার
থেকে উঠে আস্তে আস্তে তানিয়ার
কাছাকাছি গেলাম। কৌতুহলী ভাব
নিয়ে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,
-আপনি এখানে?
তানিয়া কটমট চোখে আমার
দিকে তাকালো। আর
বিরক্তি ভরা কন্ঠে জিজ্ঞাস করলো,
-আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা।
তবে চেনাচেনা লাগছে।
আমি উত্সাহিত গলায় উত্তর দিলাম,
-ঔ যে সিএনজি তে। তিন জনের
সিটে চাপাচাপি করে চারজন
বসেছিলাম। সাথে আপনার আরো দুইজন
বান্ধবী ছিল।
-হুম, চিনতে পেরেছি।আর
আমি এখানে এমনিতেই এসেছি।
তানিয়া আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করছে। কারণ ও এখন হলুদ শার্ট
পড়া ছেলেটির চিন্তায় মগ্ন।
হয়তো হিসাব মেলাতে পারছে না, মানুষ
এতো নিষ্টুর কেনো?
তাই নীল শার্ট পড়া কারো প্রতি আগ্রহ
দেখানোর তার কথা নয়।
তানিয়া নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা অন করলাম।
সাথে সাথে একটা মেসেজ,
-ছিঃ মানুষ এতো নিচ হতে পারে !!
তানিয়া কে ফোন দিয়ে যাচ্ছি।
তানিয়া ফোনটা ধরছে না।
নিজেরই নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।
শেষে ওকে মেসেজ দিলাম।
-প্লিজ ফোনটা ধরো। আমার একটু প্রবলেম
ছিল। আর আমি দোতলাতেই আছি।
তানিয়া এবার নিজেই ফোন দিল।
কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম।
তানিয়া কাঁদছে। ফোনো কোনো মেয়ে মানুষ
কাঁদছে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। কোনো কথাই
বলতে পারছে না। আমি ওকে অপরাধীর
গলায় বললাম, তুমি নিচে দাড়াও। আমিই
উপর থেকে নামছি।
নিচে এসে তানিয়ার পাশাপাশি আবার
দাড়ালাম। তানিয়া আমায়
দেখে আবারো বিরক্ত। চোখের জল
গুলো আড়াল করার আপ্রাণ
চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমি তানিয়াকে মুচকি হেসে বললাম,
-দাড়িয়ে না থেকে চলুন কোথাও
গিয়ে বসি।
আমার এই টাইপ কথা শুনে তানিয়া চোখ
মুখ লাল করে আমার দিকে তাকালো।
মনে হচ্ছে চোখের আগুনে আমায়
গিলে খাবে। কিন্তু তানিয়া কিছুই
না বলে আস্তে আস্তে দৃষ্টি অন্য
দিকে ফিরিয়ে নিল। হয়তো ভাবছে,
ছেলেটা এতো বেহায়া কেনো ?
সিএনজিতে দেখেছে বলে এভাবে গায়ে পড়ে কথা বলতে হবে।
আমি মোবাইল টা বের করে ওর
নাম্বারে ফোন দিলাম। ওর
ফোনটা বাজছে। ও চোখের পলকেই
ফোনটা ধরে কানে নিল। আমি ওর
পাশে দাড়িয়ে থেকেই ওকে বললাম,
-কি যাবে না আমার সাথে???
-আরে আমি তো দাড়িয়েই আছি।
তুমি আসছো না কেনো?
আমি বিড় বিড় করে উত্তর দিলাম,
-আমিও তো দাড়িয়ে আছি।
এবার যেনো তানিয়ার খেয়াল হলো।
ফোনটা কানে রেখেই অবাক চোখে আমার
দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ওর
যেনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমি লজ্জা শরম মাথা খেয়ে তানির
হাতটা ধরে বললাম,
-এবার চলো তো আমার সাথে।
দুজন পাশাপাশি হেটে যাচ্ছি।
তানিয়া কিছুই বলছে না। ওর ঘোর
হয়তো এখনো কাটি নি।
হঠাত্ নীরবতা ভেঙ্গে তানিয়াই
কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
-তোমাকে আমার
কি করতে ইচ্ছে করছে জানো?
-কি???
-কান ধরে উঠ বস করাতে।
তুমি এতো বড়ো চিট। এত্তো গুলা পাজি,
এত্তো গুলা গাধা, এত্তো গুলা বান্দর।
এবার আমি ওর দিকে তাকিয়ে খিঁল খিঁল
করে হেসে উদাস ভঙ্গিমায় বললাম,
-তুমি যে "এত্তো গুলা তানি" সেদিন
সিএনজিতে বসেই চিনে নিয়েছিলাম।
তাই "এত্তো গুলা মজাও"
লুটে নিয়ে ছিলাম। আর
তোমাকে "এত্তো গুলা সারপ্রাইজ"
দেবো বলে সব কিছুই পেটের মাঝে চেপেও
রেখেছিলাম।।
এবার তানির এত্তো গুলা কিল আমার
পিঠে বুকে পড়তে লাগলো।।।
বুঝতে পারছি মেয়েটা খুব
বড়ো একটা সারপ্রাইজ পেয়েছে। আর আমার
নিজেকে গল্প উপন্যাসের নায়কের
মতো লাগছে।।।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন