বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

ভালবাসার গল্প

এই কি করিস ?
-চুপ থাক !
-আচ্ছা ! গার্লফ্রেন্ড পেয়ে ফ্রেন্ড কে ভুলে গেছিস ?
-ফুট ! এখন বিজি !
-এখন ফুট ! থাক তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে ! আমি গেলাম !
লিয়া অফ লাইনে চলে যায় ! অপু মেসেঞ্জারের উইনডো থেকে চোখ ফেসবুকের ম্যাসেজ উইন্ডোর দিকে নিয়ে এল । ওখানে ততক্ষনে গোটা কয়েক মেসেজ চলে এসেছে !
-এই তুমি কোথায় ?
-এই কোথায় ?
-কোথায় গেলে ?
-ভুলে গেছো আমাকে ? কার সাথে কথা বলছো ?
অপু হাসে কেবল ! তাড়াতাড়ি রিপ্লে দেয়
-এই তো আমি পাখি ! এই তো ! কোথায় যাই নি তো !
-তাহলে রিপ্লে দাও না কেন ? হুম ?
-দিতেছি পাখি !
-হুম !!!
-আই লাভ ইউ !
-হবে না । আবার বল !
-আই লাভ ইউ !
-হুম । হয়েছে ! আই লাভ ইউ !
অপুর মন টা আজ অনেক বেশি ভাল । অনেক বেশি । আজ কত দিন পরে এই কাঙ্খিত লাইনটা ও বলতে পারছে । এমন কি সেই মেসেজটার রিপ্লেও আসতেছে । বারবর বলতে ইচ্ছে করছে । অপুর কেবল মনে হচ্ছে সারা দিনই যেন কথা বলুক ওকে !
-এই শুন !
-হুম শুনছি ।
-এখন ঘুমাবো ?
-আমিও ঘুমাবো ! আমার সাথে ঘুমাবা ?
-দুষ্টামী করবা না !
-করবো ! তোমার সাথে দুষ্টামি করবো না তো কার সাথে করবো ?
-হুম ! হয়েছে ! এখন রাখো !
-না ! তুমি যাবা না ! তুমি যাবা বলে দিলাম !
লিয়া অপুর পাগলামো দেখে হাসে । ছেলেটা কি পাগলামো শুরু করেছে । এমন একটা ভাব যেন ও সত্যি সত্যি ওর টিয়া পাখি ! এমন পাগলামো কেন করছে । সেই ১২ টার দিক থেকে ওদের চ্যাটিং শুরু হয়েছে এর ভিতর ছেলেটা অন্তত হাজার বার আই লাভ ইউ লাইনটা বলেছে ! এমন কেন করছে ছেলেটা ?
অপুকে বাস্তবে খুব একটা চিনে না লিয়া । কেবল অনলাইনেই পরিচয় । প্রথমে ব্লগ পড়তো ! তারপর ম্যাসেঞ্জারে । এখন ফেসবুকে ।
লিয়া খুব বেশি অন লাইনে থাকতো না । একদিন এক বন্ধুর ফেসবুক শেয়ার একটা ব্লগ পোষ্ট দেখে প্রথম ছেলেটার ব্লগে ঢুকে লিয়া ।
লিয়ার এখনও মনে আছে গল্পটার নাম ।
সাইনবোর্ড । একটা মেয়ে ছেলের বাড়ির সামনে একটা সাইনবোর্ড নিয়ে হাজির । তাকে বিয়ে করতে হবে । তারপর ঘটতে থাকে মজার কত গুলো ঘটনা ।
গল্পটা পড়ে লিয়ার মন চট করেই ভাল হয়ে গেল । ওর মন টা কদিন থেকেই বেশ খারাপ ছিল । গল্পটা পড়ে আসলেই ভাল লাগলো ওর । তারপর থেকেই ছেলেটার ব্লগে নিয়মিত হয়ে গেল ! একটা অবাক হওয়া বিষয় ও লক্ষ্য করলো যে ছেলোর পুরো ব্লগ জুরে সব আজগুবি ভালবাসার গল্পে ভরা । কিন্তু আজগুবি হলেও গল্প গুলো পড়লে মন ভাল হয়ে যায় !
আর সব থেকে বড় কথা ছেলেটা সব সময় হ্যাপি এন্ডিংয়ের গল্প লেখে । নিশ্চই ছেলেটার জীবনে কোন কষ্ট নাই ! এই জন্য মনে হয় সব সময় এমন আনন্দের গল্প লিখতে পারে !
এই শুনো !
-হুম !
-আকলে অনেক দেরি হয়ে গেছে !  এখনই ঘুমাতে হবে নয়তো আম্মু বকবে !
-তোমার আম্মু জেগে আছে ?
-না ।
-তাহলে ? সে কিভাবে জানবে ?
-যদি চলে আসে ?
-আসবে না ! আমি বললাম !
-কিভাবে জানো যে আসবে না !
-আমি সব জানি !
——–০———
বৃক্ষের সাথে আমার পরিচয় খুব সাধারন ভাবেই । অল্প কিছু মানুষ আমার লেখা পড়তো তার ভিতর সে ছিল ! আসলে আমি প্রথমে জানতামই না যে ও আসলে একজন মেয়ে ! যেদিন থেকে জানলাম সেদিন একটু অবাক হয়েছিলাম !
আস্তে আস্তে ওর সাথে পরিচয় হয় ! প্রথমে আমাদের মেসেঞ্জারে কথা হত । আমি আমার কথা গুলো বলতাম । ও বলতো ওর কথা গুলো ! আমরা দুজনেই কষ্টে ছিলাম ! কেবল দুজনের কষ্টের কথা গুলো শেয়ার করে নিতাম একে অপরের সাথে ।
মনের ভিতর একটা শান্তি লাগতো ! ওর সাথে কথা বলেই একটা গল্প লিখেছিলাম অপরিচিতার সাথে কথপোকথন !
এভাবেই দিন যাচ্ছিল কেটে ! তারপর একদিন অদ্ভুদ একটা কাজ করলাম আমি । কেন করলাম ঠিক বলতে পারবো না ! কিন্তু করলাম !
টিয়াপাখি নামের আমার একটা ফেইক আইডি খোলা ছিল । ঐ আইডিটা আমি নিজের সান্তনার জন্য খুলে ছিলাম । যখনই মন খারাপ হত আমি টিয়াপাখি আইডিটাতে মেসেজ পাঠাতাম । ওর ওয়ালে কত কিছু লিখতাম ! কোন কারন নাই । এমনিই লিখতাম ! কোন দিন সেগুলোর জবাব আসতো না ! একদিন সেই আইডির পাসওয়ার্ডটা আমি বৃক্ষ্যকে দিয়েদিলাম !
ও আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমি আমি কেন ওকে আইডিটা দিলাম আমি কোন উত্তর দিতে পারি নি !
তারপর ……
বৃক্ষ্য সেই আইডি দিয়ে আমার সাথে প্রথম চ্যটিং করলো !
বুকের ভিতর কেমন লাগছিল আমি বলে বোঝাতে পারবো না । আমি আই লাভ ইউ বলছি আর সেইটার উত্তর আসতেছে ! আমার আর কিছু জানার দরকার ছিল না । আমি সেদিন কত বার যে কথাটা বলেছিলাম আমি জানি না ! সেদিন আসলেই এমন কিছু হয়েছিল । মেসেঞ্জারে বৃক্ষ্য রয়েছে আর ফেসবুকে টিয়াপাখি ! যদিও দুজনই একই মানুষ !
তারপর এমন হয়ে গেল যে সারা দিন ফেসবুকে মেসেজ পাঠাই ! মেসেজের রিপ্লে না আসলে ভাল লাগে না ! মনের ভিতর শান্তি পাই না । কোন উপাই না দেখে ওর কাছে মোবাইল নাম্বার চাইলাম । প্রথমে দিতে চাইলো না । তবুও কল না করার সাপেক্ষে ফোন নাম্বার দিল । কিন্তু তাই কি হয় ?
একদিন সকালে ও নিজেই আমার কাছে ফোন দিল ! প্রথমে আমি ঠিক মত চিন্তে পারি নি । মনে হচ্ছিল ১২/১৩ বছরের কোন বাচ্চা মেয়ের সাথে কথা বলছি ! কন্ঠে একটা আদুরে আদুরে ভাব ! অবশ্য এখনও আমার তাই মনে হয় ! বৃক্ষের মোবাইল ভয়েস আসলেই বাচ্চাদের মত ।
সেদিন কি বলেছিলাম আমার নিজের মনে নাই । আসলে ঘুমের ঘোরে কি বলেছি আমার ঠিক মত মনে নেই । তবে বলে আমি নাকি খুব ভাব নিয়ে কথা বলছিলাম । কে জানে !
এভাবেই ওর সাথে কথা হতে থাকে । কথা বলতে বলতে ওর কত খানি কাছে চলে গেছি আমি কোন দিন বুঝিও নি ! এমনও হয়েছে আমরা ফোনে কথা বলছি আর সাথে চ্যটিং করছি ! যে কথাটা মুখে বলতে পারছি না সেটা ইনবক্সে বলছি ! কয়েকদিনের ভিতরই ইনবক্সের আই লাভ ইউ মুখে চলে এল !
আমরা সারা দিন কথা বলতাম । আমি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম এতো কথা আমি কিভাবে বলি ! সে ততদিনে টিয়াপাখি আইডি থেকে অপুর হৈম আইডি তে চলে এসেছে ।
তখন অবশ্য অনেকেই মনে করতো যে অপুর হৈম আইডিটাও আসলে আমারই তৈরি ! আমি বেশি কিছু বলি নি !
ও হ্যা ! আর একটা কথা । ওর ব্লগার বটবৃক্ষ আইডিটাও আমি খুলে দিয়েছি ! ঠিক খুলে দিয়েছি বললে ভুল হবে । আগে যে টিয়াপাখি আইডিটা ছিল সেইটা নাম বদলে ব্লগার বটবৃক্ষ করেছি !
এভাবেই দিন যাচ্ছিল ! ও একবার অপুর হৈম দিয়ে আমার পোষ্টে কমান্ট দিতো আবার ব্লগার বটবৃক্ষ আইডি তে । আমার মজাই লাগতো !
তারপর একদিন ও বলল যে এই ভাবে কথা বলাটা ঠিক হচ্ছে না । আমাদের কথা বন্ধ হওয়া উচিৎ ! তারপর ও কথা বলা বন্ধ করে দিল ! আমিও অভিমান করে কথা বললাম না ! সাতদিন পরে ও নিজেই আবার আমার কাছে ফোন দিল ! ফোন দিয়ে একটু অভিমান কন্ঠে কত কিছু বলল ! আমি কেবল মনে মনে হাসি !
এই সিম্পল কাহিনী আমাদের ! এতোদিন ব্লগে আমি কেবল বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখেছি । মানুষের গল্প লিখেছি ! আজকে আমার প্রেম কাহিনী বলে দিলাম !
আসলে আমি গত প্রায় দুই সপ্তাহ দিয়ে এই গল্পটা লেখার চেষ্টা করছিলাম ! কত ভাবে ভাবলাম ! কত ভাবে ট্রাই করলাম । কিন্তু মন মত হল না ! কেন হল না জানি না ! একবার ভাবলাম লিখবোই না কিন্তু সামনের কথা বলা যায় না । তাই লিখে দিলাম ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন